জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী পিউ দাশ। চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজানের তহশিলদার পাড়ায় ১৯৯৯ সালে তার জন্ম। পিতার নাম রঞ্জিত দাশ এবং মাতার নাম কৃষ্ণা দাশ। দৈহিকভাবে খাটো এবং স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারেন না তিনি। অন্যের সাহায্য বা লাঠিতে ভর করে অল্প হাঁটতে পারেন। শৈশবে মা-বাবার স্নেহ-মায়ায় বড় হন পিউ।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার মধ্যে শিক্ষার প্রতি আগ্রহ জন্মায়। প্রতিবন্ধী সন্তানের আগ্রহ দেখে মা প্রথমে তাকে পারিবারিকভাবে বর্ণজ্ঞান শেখান। এরপর যথেষ্ট বর্ণজ্ঞান অর্জন করলে মা তাকে বাড়ির সামান্য দূরত্বে অবস্থিত পূর্ব সুখছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। প্রতিদিন মা তাকে কোলে করে স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং ছুটির পর আবার কোলে করে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেন। শিক্ষকরাও পিউ দাশের লেখাপড়ায় আন্তরিক ছিলেন।
এলাকা পরিদর্শনকালে পিউ দাশের মা কৃষ্ণা দাশ এসব কথা জানান। তিনি বলেন, শৈশবকালে তার প্রতিবন্ধী মেয়ে পিউ দাশ ছিল একটি পুতুল সমতুল্য। সংসারের আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতার পরও তিনি পিউ দাশকে মানুষ করতে হাল ছাড়েননি। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে বাড়ির অদূরে অবস্থিত সুখছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করিয়ে দেন। কোলে-পিঠে করে আনা-নেয়ার মাধ্যমে তার মেয়ের স্কুল জীবনের লেখাপড়া চলতে থাকে। শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতায় তার মেয়ে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৩ দশমিক ১১ পেয়ে কৃতকার্য হয়।
কলেজের ভর্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে সাতকানিয়া উপজেলাধীন এম.এ.মোতালেব কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে। মা তাকে পূর্বের মতো কোলে-পিঠে করে কলেজে নিয়ে গিয়ে টেবিলে বসিয়ে দিতেন। কলেজ ছুটি হলে তাকে একইভাবে বাড়িতে নিয়ে আসতেন। শিক্ষা জীবনের অগ্রযাত্রায় পিউ দাশ ২০২০ সালের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার জন্য নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে থাকে। ৪বিষয়ে পরীক্ষা দেয়ার পর ৫ম বিষয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় সময় লোহাগাড়া উপজেলার বার আউলিয়া মাজার সংলগ্ন আরকান সড়কে এক সড়ক দুর্ঘটনায় পিউ দাশ গুরুতর আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকে। ফলে, সে পরবর্তী নির্বাচনী পরীক্ষাসমূহে অংশ গ্রহণ করতে না পারায় ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেনি।
মা কৃষ্ণা দাশ বলেন, সর্বনাশা সড়ক দুর্ঘটনায় তার মেয়ের কলেজ জীবনের রঙিন স্বপ্ন কেড়ে নিলে পিউ দাশ শিক্ষা জীবন থেকে ছিটকে পড়ে। তার প্রতিবন্ধী মেয়ে পিউ দাশ বর্তমানে শুধু পরিবারের স্মৃতি। শত আর্থিক দুঃখ-দৈন্যতার মাঝেও প্রতিবন্ধী মেয়ের প্রতি তাদের আন্তরিকতার কোন ঘাটতি ঘটেনি। যতটুকু সম্ভব অন্তরের কোমল স্নেহ ও মায়া-মমতা দিয়ে আমরা মা-বাবা ও স্বজনেরা সকলেই তাকে বুকে জড়িয়ে রেখেই লালন-পালন করে যাচ্ছি। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবন্ধী ভাতায় সংসারের ব্যয়ভার নির্বাহে কিছুটা সুযোগ পায়।
কেকে/ আরআই