ইসলামি ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো কুরআন কম্পিটিশনের মতো ইতিবাচক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জুলাই-আগস্টের পর আমাদের কার্যক্রম দ্বারা সকলের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে চাই যে ফ্যাসিবাদী ধারার রাজনীতির কবর ৫ আগস্ট হয়ে গেছে।’সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে ইসলামি ছাত্রশিবির বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের নবীন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রামে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অনুষ্ঠানে জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বরিশালে আসার পর একটু বেশিই গরম অনুভূত হচ্ছে, শিক্ষার্থী বন্ধুদেরও কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীলদের কাছে শুনলাম এখানে কোনো বড় অডিটোরিয়াম নেই, যেখানে বসে স্বস্তির সঙ্গে কথা বলা যাবে। বিশ্ববিদ্যালয় দায়িত্বশীল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন তারা এ ব্যবস্থা করেন, তার অনুরোধ জানান।’
একই সঙ্গে বরিশাল অঞ্চল যেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিখ্যাত হয়, সেদিকে শিক্ষার্থীদের নজর দিতে আহ্বান জানান তিনি।
আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ার টাকা আসে কৃষকদের টাকা থেকে। তারা স্বপ্ন দেখে আমাদের নিয়ে, আমরা ভালো কিছু করব সেটার জন্য। তাদের সেই চাহিদার দিকে আমাদের তাকাতে হবে, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।’
শিক্ষার্থীদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, ‘সকালবেলা হলো সৃষ্টিকর্তার নিয়ামতস্বরূপ বরকতের সময়। সকালের এই বারাকাহর (বরকতের) সময়টা আমাদের ঘুমিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সকালের এই সময় কাজে লাগাতে রাতে বেশি না জেগে দ্রুত ঘুমাতে হবে।’
শিবিরের এত বড় বড় প্রোগ্রামে খরচের আয়ের উৎস কী— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যেক জনশক্তিই আমাদের ডোনার। তারা তাদের মাসিক খরচ থেকে কিছু কিছু টাকা সংগঠনকে দিয়ে থাকেন। তা ছাড়াও যারা একসময় শিবির করতেন এবং এখন ভালো চাকরি করেন বা দেশের বাইরে থাকেন, তারা আমাদের খুঁজে খুঁজে অর্থ দেন বড় প্রোগ্রামের আয়োজনের জন্য।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মো. আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক সোহেল রানা, কেন্দ্রীয় স্পোর্টস সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হারুন অর রশিদ রাফি, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক জাকারিয়া ইসলাম বাবু।
ক্যারিয়ার গাইডলাইনের ওপর আলোচনা করার সময় সোহেল রানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া আল্লাহর রহমত। এই বিশেষ রহমত প্রাপ্ত হয়ে বিপথে যাওয়ার আগেই পড়ালেখার টেবিলে বসতে হবে এবং দ্রুত শুরু করতে হবে। বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, কেননা খারাপ মানুষের সংস্পর্শে আসলে মানুষ খারাপ হয়ে যায়।’
‘তবে, শুধু পড়াশোনার মধ্যে ডুবে থাকলেই হবে না। নিজের মধ্যে বৈচিত্র্য আনতে নিজেকে কো-কারিকুলামের (সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের) সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ইনফরমেশন এবং নলেজ আয়ত্ত করতে হবে। যার এগুলো বেশি, তার সব জিনিস চমৎকার এবং সুন্দর বাস্তবায়ন হবে। দক্ষতা অর্জন করতে হবে পাবলিক স্পিকিং, ডিবেটিং—এগুলো অর্জন করলে অন্যদের চেয়ে কয়েক গুণ এগিয়ে থাকা যায়।’
হারুন অর রশিদ রাফি বলেন, ‘ক্যারিয়ার হলো নিজে যাওয়ার সাথে সাথে কয়েকজনকে সাথে বহন করা। অর্থাৎ, নিজেকে ভালো কিছু করতে হবে এবং অন্যদেরকেও সাহায্য করতে হবে। ভালো ক্যারিয়ার গঠনের জন্য যা শুরু করতে চাচ্ছেন, তা আজকেই শুরু করতে পারলে ভালো ক্যারিয়ার করা সম্ভব, পড়াশোনা কালকের জন্য ফেলে রাখা যাবে না।’
‘এসপি, ডিসি হওয়ার সাথে সাথে যদি পরকালের মুক্তি না পাই, তাহলে আমরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। এহকালের ক্যারিয়ারের সফলতার পাশাপাশি পরকালের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পরকাল।’
উল্লেখ্য, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের মধ্য দিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকেই ছাত্রশিবিরের কমিটি ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রকাশ্যে তেমন কোনো বড় ধরনের প্রোগ্রাম করতে না পারলেও সংগঠনটি প্রতি বছরই স্বল্প পরিসরে বা গোপনীয়তার সাথে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছেন বলে জানিয়েছেন শিবিরের একাধিক নেতা। গত বছর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই বছরই প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে নবীন বরণ প্রোগ্রাম করেছে তারা। অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কার হিসেবে টি-শার্ট, শাল, ডায়েরি, কলম, চাবির রিং, বই ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা ছিল। এ অনুষ্ঠানে প্রায় ১ হাজার ৫৫৮ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেন।