বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫,
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড      শেখ হাসিনার ২১ বছরের কারাদণ্ড      শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের মামলার রায় আজ, আদালতে বিজিবি মোতায়েন      এবার একযোগে ১৫৮ ইউএনওকে বদলি      হংকংয়ে আবাসিক ভবনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৪, নিখোঁজ ২৭৯      শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পর্যালোচনা করা হচ্ছে      ৫০তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ      
অর্থনীতি
লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনায় ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালসের সঙ্গে চুক্তি সই
৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বন্দর খাতে নতুন মাইলফলক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ৯:০৭ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো উন্নয়নের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় সূচিত হলো। ডেনমার্কভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস, যা এপি মোলার-মেয়ার্স্ক গ্রুপের সম্পূর্ণ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, চট্টগ্রাম বন্দরে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল বাস্তবায়নে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং অন্যতম বৃহৎ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্প।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এপিএম টার্মিনালস এবং স্থানীয় অংশীদার কিউএনএস কনটেইনার সার্ভিসেস লিমিটেডকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে লেটার অব অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পিপিপি কর্তৃপক্ষ, এপিএম টার্মিনালস এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের শীর্ষ পর্যায়ের অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্পটি ৩০ বছরের কনসেশন চুক্তির আওতায় সম্পূর্ণ বেসরকারি মূলধন বিনিয়োগে বাস্তবায়িত হবে। এপিএম টার্মিনালস প্রকল্পটির নকশা, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনা করবে, তবে বন্দরটির মালিকানা থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অধীনে। ফলে সরকারের মূলধনী ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপিএম টার্মিনালস বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনা করছে এবং বিশ্বের শীর্ষ ২০টি বন্দর-এর মধ্যে ১০টির অপারেটর। ইউরোপের দুর্নীতিমুক্ত দেশ ডেনমার্কে সদর দপ্তর থাকা এ প্রতিষ্ঠান এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেমন চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়াতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে।

লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল হবে দেশের প্রথম গ্রীন ও স্মার্ট পোর্ট, যা বর্তমান সক্ষমতার দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ধারণ করতে পারবে। ২৪ ঘণ্টা নাইট ন্যাভিগেশনসহ এটি পূর্ণমাত্রায় পরিচালিত হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরাসরি বৈশ্বিক শিপিং নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং রপ্তানি-আমদানি খাতের পরিবহন ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাননীয় লার্স লকে রাসমুসেন ভার্চুয়াল বার্তায় বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে মেয়ার্স্ক-এর অংশীদারিত্ব দীর্ঘদিনের এবং আমাদের দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় বাণিজ্যিক সম্পর্কের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশে আসা-যাওয়া সমস্ত কনটেইনারের প্রায় ৩০ শতাংশ পরিচালনা করে মার্স্ক। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালে মেয়ার্স্ক-এপিএম টার্মিনালস-এর এই বিনিয়োগ একটি বাস্তব ও টেকসই অংশীদারিত্বের শক্তিশালী প্রতীক, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের প্রতি গভীর আস্থার প্রকাশ।”

এপিএম টার্মিনালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কিথ স্বেন্ডসেন বলেন, “এই গ্রিনফিল্ড প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা স্থানীয় ম্যানুফ্যাকচারার, রপ্তানিকারক ও আমদানিকারকদের কার্যক্রমে সক্রিয় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারব। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির ভিত্তি গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মোনিরুজ্জামান বলেন, “এখনই আমাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। চট্টগ্রাম একটি নদী ও ফিডার বন্দর হওয়ায় লজিস্টিক্স (যানবাহনের) খরচ অনেক বেশি। প্রতিযোগিতামূলক হতে হলে আমাদের এমন অবকাঠামোর প্রয়োজন যা দ্রুত বাজারে পৌঁছানোর সুযোগ করে দেয়। এই টার্মিনাল সেই লক্ষ্যপূরণে সহায়ক হবে।”

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা ও জটিলতা চট্টগ্রাম বন্দরের সম্ভাবনার পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করেছে। লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণের মাধ্যমে বড় জাহাজ ভিড়ানোর সুযোগ তৈরি হবে এবং রপ্তানিকারকদের জন্য বন্দর সেবা আরও নির্ভরযোগ্য হবে। মেয়ার্স্কের মতো অভিজ্ঞ অপারেটরের আগমন আমাদের দৈনন্দিন সমস্যাগুলোর বাস্তব সমাধানে সহায়তা করবে।”

পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক চৌধুরী বলেন, “এই প্রকল্প প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে পিপিপি এখন কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। আমরা একটি বিশ্বমানের টার্মিনাল ও পোর্ট পেতে যাচ্ছি, এবং এর জন্য সরকারকে কোনো ঋণ নিতে হয়নি। লালদিয়া টার্মিনাল চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এই ধরনের প্রকল্প আমাদের বিনিয়োগকারীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা ও নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস উভয়ই তৈরি করে।”

যেসব সুবিধা পাবে বাংলাদেশ—

১. বৃহৎ বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI): চুক্তির আওতায় এপিএম টার্মিনালস প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে, যা হবে বাংলাদেশে এককভাবে সর্ববৃহৎ ইউরোপীয় ইক্যুইটি বিনিয়োগ। (দ্রষ্টব্য: কনসেশনের পুরো মেয়াদকালে এই বিনিয়োগের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি হতে পারে)। এপিএম টার্মিনালের মতো একটি বিশ্বমানের বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আগমন করলে তা দেশের অন্যান্য খাতে অতিরিক্ত বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) আকৃষ্ট করবে।

২. কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি: এলসিটি চালু হলে বন্দরটির কনটেইনার হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ৮ লক্ষাধিক টিইইউ (TEU) প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে,  যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় প্রায় ৪৪ শতাংশ বেশি। টার্মিনালটি ২০৩০ সালের মধ্যে কমিশন্ড হওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

৩. সরকার ও সিপিএ’র আয় বৃদ্ধি: প্রকল্পটি রাজস্ব ভাগাভাগি ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে সিপিএ প্রতি কনটেইনারে নির্দিষ্ট ডলার-নির্ভর রাজস্ব পাবে। একই সঙ্গে কর, শুল্ক এবং সামুদ্রিক আনুষঙ্গিক সেবার মাধ্যমে সরকারের আয়ও বাড়বে। 

৪. কর্মসংস্থান: এই প্রকল্পের নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে ৫০০-৭০০ জন সরাসরি কর্মসংস্থান এবং ট্রাকিং, গুদামজাতকরণ, লজিস্টিকস ও স্থানীয় এসএমই খাতে কয়েক হাজার পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। 

৫. আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা ও কার্যপদ্ধতি: এপিএম টার্মিনালস বিশ্বমানের হেলথ, সেফটি, সিকিউরিটি ও এনভায়রনমেন্ট (HSSE) নীতিমালা প্রয়োগ করবে, যা দুর্ঘটনার হার কমিয়ে কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

৬. আধুনিক প্রযুক্তি স্থানান্তর: এপিএমটির উন্নত ডিজিটাল টার্মিনাল অপারেটিং সিস্টেম, LEAN পদ্ধতি ও FLOW প্রসেস ফ্রেমওয়ার্ক বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামোকে আধুনিক করবে এবং স্থানীয় প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

৭. ব্যবসায়িক ব্যয় হ্রাস ও দ্রুত সরবরাহ: দ্রুত জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম ও কম অপেক্ষা সময়ের মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা,  বিশেষ করে পোশাক, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাতের উদ্যোক্তারা সময়মতো সরবরাহ দিতে সক্ষম হবেন, যা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।

৮. কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন: এপিএম টার্মিনালসের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রকৌশলী, প্রযুক্তিবিদ ও ব্যবস্থাপকরা আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ পাবেন, যা দেশের সামগ্রিক লজিস্টিক খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।

৯. অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক প্রবাহ বৃদ্ধি: বন্দরটির বার্ষিক ৮ লক্ষাধিক টিইইউ মালবাহী সক্ষমতা ঢাকা-চট্টগ্রাম ও অন্যান্য অর্থনৈতিক করিডোরে নতুন ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো, কোল্ড চেইন ও শিল্পাঞ্চল স্থাপনে উৎসাহ দেবে।

১০. সবুজ ও জলবায়ু-সহনশীল বন্দর অবকাঠামো: জ্বালানি দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহার ও জলবায়ু অভিযোজন উদ্যোগের মাধ্যমে বন্দরটির কার্বন নির্গমন হ্রাস পাবে এবং তা বাংলাদেশের প্যারিস চুক্তির (NDC) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।

১১. বাংলাদেশের পিপিপি খাতের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন: একটি বৈশ্বিক মানের দীর্ঘমেয়াদি কনসেশন চুক্তি বাংলাদেশের পিপিপি সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে, যা ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ, পরিবহন ও সামাজিক অবকাঠামো খাতে নতুন বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ   বন্দর খাত   নতুন মাইলফলক  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দ্বিতীয় বারের মতো ভূমিকম্পে কাঁপল ইন্দোনেশিয়া
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীন-মার্কিন দ্বৈরথ
বয়ান শিল্পাঙ্গনের তৃতীয় নাট্য কর্মশালা ৩০ নভেম্বর থেকে
অস্থিতিশীল বিদ্যুৎ খাত : উত্তরণের উপায়
প্লট দুর্নীতি : জয়-পুতুলের পাঁচ বছর কারাদণ্ড

সর্বাধিক পঠিত

চট্টগ্রামে কবির হোসেন সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপির মামলা
বেনাপোলে বিএনপির উঠান বৈঠক, উন্নয়ন ভাবনা তুলে ধরলেন তৃপ্তি
ধামরাইয়ে সাত অবৈধ ইটভাটায় অভিযান, ১৫ লাখ জরিমানা
বিএনপি যে কথা দেয় সে কথা রাখে : নাসিরুল ইসলাম
বুধবারের আলোচিত ছয় সংবাদ

অর্থনীতি- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close