বিসিবির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়াচ্ছেন গায়ক থেকে ক্রিকেট অঙ্গনে আসা আসিফ আকবর। বিশেষ করে ফুটবল ও ফুটবলারদের নিয়ে তার কটূক্তিমূলক মন্তব্যে উত্তাল দেশের ক্রীড়াঙ্গন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সমালোচনার ঝড় তো আছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ফুটবল মহলের ক্ষোভ। কদিন পর পরই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে তিনি এমন মন্তব্য করছেন, যা দেশের জনপ্রিয় খেলাটির প্রতি চরম অবজ্ঞা ও অসম্মান হিসেবে দেখা হচ্ছে। দায়িত্ব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আচরণে এই পরিবর্তন অনেকের কাছে ‘ক্ষমতার দাপট’ হিসেবেও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক হিসেবে যে সংযম ও পরিমিতিবোধ দেখানোর কথা, সেটির ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না তার সাম্প্রতিক বক্তব্যে। বরং প্রতিটি মন্তব্যই নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। এতে শুধু ফুটবল ও ফুটবলাররাই নয়, বিভিন্ন ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংগঠকরাও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।
মাঠের খেলাকে কেন্দ্র করে দেশের দুই বড় জনপ্রিয় খেলাই সাধারণত সুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে এক খেলার উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তার এমন আচরন পুরো ক্রীড়া পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করছে বলে মনে করছেন অনেকে। ফলে আসিফ আকবরের লাগামহীন মন্তব্য এখন ক্রীড়াঙ্গনের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
এর আগে বিসিবি কনফারেন্সে অংশ নিয়ে আসিফ আকবর বলেন, ‘ফুটবলারদের কারণে দেশে ক্রিকেট খেলা চালানো যাচ্ছে না। কারণ তারা স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে এবং উইকেট ভেঙে ফেলছে। প্রত্যেক জেলায় স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে ফুটবল। যেখানে ফুটবলের কাজ নেই, সেখানেও দখল করে রেখেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফুটবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ। আমি সরাসরি বলতে চাই। কারণ ক্রিকেট একটা আভিজাত্যের খেলা। এখানে অনেক নিয়ম-কানুন আছে। সিনিয়র যারা আছেন, বোর্ড পরিচালক দ্রুত বসেন। আমরা তো মারামারি করতে যাব না। প্রয়োজন হলে করব। কারণ হচ্ছে আমাদের খেলতে হবে, আমাদের বাচ্চারা খেলবে।’
এমন মন্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় ওঠে। সাবেক ফুটবলাররা তার বিরুদ্ধে তীব্র মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া জানান। তাদের মধ্যে একজন জাহিদ হাসান এমিলি। তিনি ক্ষমা চাওয়ার জন্য আসিফকে ২ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। এমিলি অবশ্য আসিফকে কটূক্তি করেছিলেন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এর জবাব দেন আসিফ। তিনি বলেন, ‘যখন মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, সমস্যা মোকাবিলা করার মতো আর কোনো যুক্তি থাকে না, তখন এ ধরনের বক্তব্য আসে। আশা করি তার এখন জ্ঞান হবে। আমি জ্ঞান দেওয়া শুরু করেছি; শিক্ষিত হয়ে যাবে।’
আরেক সাক্ষাৎকারে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে আসিফ বলেন, ‘পারমাণবিক যুদ্ধ হলেও আমি ক্ষমা চাইব না। আমি যখন ক্ষমা চাইব, নিজ থেকে চাইব। যখন আমি দেখব তাদের পারফরমেন্স ভালো, তখনই ক্ষমা চাইব।’
আসিফ আকবরের এই মন্তব্যগুলো নিয়ে বিসিবির ভেতরেও নানাভাবে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, একটি বড় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে তাকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, যাতে ক্রিকেটের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয় এবং অন্য খেলার প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর সুযোগ তৈরি না হয়। ক্রীড়াঙ্গনের স্বার্থে সংযমী ও সম্মানজনক অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন সাবেক খেলোয়াড়, কোচ ও সংগঠকেরা।
কেকে/এজে