লালমনিরহাটের আদিতমারীতে জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ৩ টার দিকে উপজেলার কমলাবাড়ী ইউনিয়নের বড় কমলাবাড়ী দারোগাবাজার এলাকায় মৃত ফরমান আলীর ছেলে আব্দুস সামাদের বাড়িতে এ হামলা হয়।
এ সময় দুজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন—সামাদের মা জয়গুন বেওয়া ও বোন ময়না খাতুন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদেরকে আদিতমারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় আব্দুস সামাদ বাদী হয়ে একই এলাকার রফিকুল ইসলামসহ ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৩০–৩৫ জনকে আসামি করে আদিতমারী থানায় মামলা করেছেন।
এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা যায়, সামাদের আগে থেকে জায়গা জমি নিয়ে প্রতিপক্ষ আসামী রফিকুলের সাথে বিরোধ চলছিল। তার বাবার রেখে যাওয়া পৈতৃক জমি নাবালক সূত্রে তার বাবার বড় ভাই মৃত হুরমুজ আলী অনুমানিক প্রায় ৩০-৪০ বছর আগে একই এলাকার প্রতিবেশি মৃত খেচু শেখের ছেলে রফিকুলে কাছে বিক্রি করে। পরে রফিকুল ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে তার নামে জমিটি দলীল করে ভোগ দখল করে আসছে। এদিকে সামাদ প্রাপ্তবয়স্ক হলে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখে তার বাবার রেখে যাওয়া জমি আছে। সেই জমি উদ্বারের জন্য লালমনিরহাট সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে আদালত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে গত ৩০ জুলাই সামাদকে জমি দখল ও ডিগ্রী প্রদান করে। এরই প্রেক্ষিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী শনিবার গভীর রাতে রফিকুল, তার ছেলে হাবু মিয়া, আল আমিন, সামছুল হক, আলাল উদ্দিন, মতি মিয়া, শহিদ মিয়া, রায়হান মিয়া, আইজুল মিয়া, বধু মিয়া, ইসলাম মিয়া, কাজল মিয়া, আ. জলিলসহ আরও অজ্ঞাত ভাড়াটে ৩০ থেকে ৩৫ জন সন্ত্রাসী দেশীয় ধারালো ছোড়া, দা, কোড়াল ও লাঠি নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে রফিকুলের বাড়ীতে প্রবেশ করে হামলা চালিয়ে ৪টি টিনের ঘর ভেঙ্গে চুরমার করে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় ঘরে থাকা বিভিন্ন আসবাসপত্র, মালামাল, ২টি খাসি, স্বর্ণালংকার, ১ লাখ টাকাসহ মোট ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকার মত তারা লুটপাট করে নিয়ে যায়। এসময় সামাদের মা ও বোন বাধা দিলে তাদের লাঠি দিয়ে আঘাত ও কুপিয়ে আহত করে। পরে তাদেরকে গুরুত্বর অবস্থায় আদিতমারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলার শিকার আব্দুস সামাদ বলেন, “দির্ঘদিন থেকে প্রতিপক্ষ রফিকুল সঙ্গে জমি নিয়ে দ্বন্ধ চলে আসছিল। গত ৩০ জুলাই আদালত থেকে জমির মামলার রায় পাওয়ার পর থেকে তারা আমাকে নানাভাবে হুমকী দিয়ে আসছিল। এমতাবস্থায় আমার পরিবারের লোকজন ঘুমিয়ে পড়লে রাত ৩ টায় রফিকুল ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা দেশী অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হামলা চালিয়ে জমির দলিল, গরু-ছাগল, স্বর্ণলংকার ও টাকা লুট করে নিয়ে যায়।”
তার ছেলে সাদিকুল বলেন, “বাড়িঘর ভেঙ্গে মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার পরেও এখনও প্রতিপক্ষরা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দিচ্ছে। এখন আমরা বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলার কারনে রাতে কোথায় থাকব তা নিয়ে শংকায় আছি। এ অবস্থায় আমরা পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
স্থানীয়দের দাবি, গভীর রাতে ভাঙচুরের শব্দ শুনে এগিয়ে গেলে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে তাড়া দেয়। তাদের ভাষায়, “এ রকম অমানবিক হামলা সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানায়।”
এদিকে, হামলার পর থেকে প্রধান আসামি রফিকুল পলাতক। তবে তার স্ত্রী মিলন বেগম সাংবাদিকদের কাছে হামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, “ঘটনার বিষয়ে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কেকে/ আরআই