জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তালিকায় নাম, বিভাগ ও আইডি নম্বর থাকলেও ভোটারদের ছবি নেই। তবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ছবি সংযোজনের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন।
শনিবার (৮ নভেম্বর) জকসুর নির্বাচন কমিশন সূত্রে এই তথ্য জানা যায়।
জকসু নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, জকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবিসহ তালিকা প্রকাশের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল এই দাবি জানায়।
নির্বাচন কমিশনের সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক জুলফিকার মাহমুদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, “আমরা চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ভোটারদের ছবি যুক্ত করার পরিকল্পনা করছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এটি বাস্তবায়নের জন্য।”
গত বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। জকসুর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তালিকায় ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউটের মোট ১৬ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রকাশের পর থেকেই উঠেছে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ।
নিয়মিত শিক্ষার্থী হয়েও অনেকে তালিকায় নাম পাননি, আবার কিছু বিভাগের মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীদের নাম এসেছে তালিকায়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে রোববারের মধ্যেই সমাধান করা হবে।
বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য রিয়াসাল রাকিব বলেন, “আমি স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। আমি এখন স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী হয়েও ভোটার তালিকায় আমার নাম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথম জকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে আর এই নির্বাচনে ভোট দেওয়া সব রানিং শিক্ষার্থীর অধিকার। তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে এই তালিকা সংশোধনের আহ্বান জানাই।”
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী ইমরান হুসাইন বলেন, “আমি স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ৪ নভেম্বর ফর্ম ফিলাপ করে রেজিষ্ট্রেশন করেছি অনলাইনে। আমার দুইটা পরীক্ষা বাকি আছে মাস্টার্স সেকেন্ডে সেমিস্টারে। নিয়ম অনুযায়ী আমার ভোটার হওয়ার অধিকার আছে।”
নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও জকসু নির্বাচনের প্রার্থী কিশোর আনজুম সাম্য বলেন, “আমি অষ্টম সেমিস্টারের রানিং শিক্ষার্থী, এমনকি মিডটার্ম পরীক্ষা দিচ্ছি। তাহলে আমাকে কেন ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো? নির্বাচন কমিশনকে এর জবাব দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ব্যাচের সবার নাম ভোটার তালিকায় আছে, শুধু আমার নেই। অন্যদিকে আমি জকসু নির্বাচনের একজন প্রার্থী। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। নির্বাচন শুরুর আগেই যদি এমনটা হয়, তাহলে পুরো কমিশনের স্বচ্ছতা নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়।”
একই বিভাগের তৌহিদ চৌধুরীও ভোটার তালিকায় নিজের নাম না থাকার অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে আইন বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়ে ফল প্রকাশ হলেও তাদের নাম এসেছে তালিকায়, যা নিয়েও চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের ব্যাচের সবাইকে ভোটার তালিকায় রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের মাস্টার্সের রেজাল্ট সপ্তাহ খানেক আগে প্রকাশ হয়েছে। আমার মতে জকসু নির্বাচনে কেবল রানিং শিক্ষার্থীদেরই ভোটার তালিকায় রাখা উচিত। এতে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।”
ভোটার তালিকার অসঙ্গতি বিষয়ে জানতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. জুলফিকার মাহমুদ বলেন, “ত্রুটির বিষয় গুলো আমাদের নজরে এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে বিভাগগুলোতে নোটিশ পাঠিয়েছি। বিভাগগুলো থেকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রোববারের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হবে।”
তিনি আরও জানান, “বেশিরভাগ বিভাগের মাস্টার্স ২০২২–২৩ সেশনের শিক্ষার্থীরা যারা এখনো পাস করেননি, তাদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় আসেনি। এসব বিষয় সমাধান করা হবে।”
কেকে/ আরআই