আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন ঘিরে তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও ক্ষোভের ঝড়। দল থেকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ জালাল উদ্দিনকে প্রাথমিক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরই এলাকায় শুরু হয়েছে আলোচনা—মাঠের জনপ্রিয় নেতাকে কেন বঞ্চিত করা হলো?
দলীয় নেতা-কর্মীদের মতে, তানভীর হুদা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম নুরুল হুদার জ্যেষ্ঠ পুত্র। বহুদিন ধরেই বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয়, নিবেদিত ও তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন জনপ্রিয় নেতা। আন্দোলন-সংগ্রামের দিনগুলোতে তিনি ছিলেন মাঠের সামনে সারিতে। অথচ তাকে মনোনয়ন না দিয়ে তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয় প্রার্থী ড. জালাল উদ্দিনকে মনোনীত করায় স্থানীয় বিএনপি ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তীব্র হতাশা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় কর্মীরা আশঙ্কা করছেন, এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত যদি দ্রুত পুনর্বিবেচনা না করা হয়, তবে ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। জনপ্রিয় নেতা তানভীর হুদার সমর্থকরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে দলের ভোটব্যাংক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
চাঁদপুর-২ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া এই বিতর্ক এখন শুধু রাজনীতির নয়, জনগণের আবেগের বিষয়ও হয়ে দাঁড়িয়েছে। তৃণমূলের হৃদয়ের আওয়াজ যদি কেন্দ্রীয় নেতাদের কানে পৌঁছে যায়, তবে হয়তো এই আসনে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত হবে—এমনটাই বলছেন মতলবের মানুষ।
মতলবের সাধারণ জনগণ ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একটাই দাবি—কেন্দ্রীয় বিএনপি যেন চাঁদপুর-২ আসনের মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করে জনগণের পছন্দের নেতা তানভীর হুদাকে প্রার্থী ঘোষণা করে।
তাদের ভাষায়, “এই আসনে বিএনপি’র জয় চাইলে মাঠের জনপ্রিয় নেতার হাতেই ধানের শীষ তুলে দিতে হবে।”
মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর গত মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তানভীর হুদা লেখেন, “চাঁদপুর-২ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা ঘোষণায় মতলবের সাধারণ জনতা ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের উপর আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। উনি নিশ্চয়ই চাঁদপুর-২ আসনের চূড়ান্ত মনোনয়নের ব্যাপারে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং আগামী দিনগুলোতেও মতলবের মাঠে মতলবের জনগণের পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। দল যাকে চূড়ান্তভাবে মনোনয়ন দেবে, আমরা সকলে মিলে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করব।”
তানভীর হুদা দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্য ও ধৈর্য ধরে থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনাদের ঐক্য, মনোবল এবং পরিশ্রমই আগামীতে চাঁদপুর-২ আসনে জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখবে। জনগণের বিজয় হবেই হবে—এটাই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।”
মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি সারোয়ার মজুমদার বলেন, “তানভীর হুদা শুধু একজন প্রার্থী নন, তিনি মতলবের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন সবার সামনে, মাঠে-ময়দানে। তার মতো পরীক্ষিত নেতাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া তৃণমূলের সঙ্গে অন্যায়।”
মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বিল্লাল মৃর্ধা বলেন, “মতলবের মানুষ জানে তানভীর হুদা সব সময় জনগণের পাশে থেকেছেন। তার বাবাও ছিলেন দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ মন্ত্রী। এমন পরিবারকে উপেক্ষা করা মানে দলের শেকড় দুর্বল করা।”
মতলব পৌর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ গিয়াস বলেন, “তানভীর হুদা আন্দোলন-সংগ্রামে দলের ভরসা ছিলেন। যেদিন তাকে মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত করা হলো, সেদিন মাঠের কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধ জানাই এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করুন।”
জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য আলাউদ্দিন খান বলেন, “তৃণমূলের কর্মীদের মনোভাব না বুঝে সিদ্ধান্ত নিলে নির্বাচনের মাঠে বিপর্যয় ঘটবে। ড. জালালকে আমরা শ্রদ্ধা করি, কিন্তু মাঠের নেতা হিসেবে তানভীর হুদার বিকল্প এই মুহূর্তে কেউ নেই।”
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কবির খান বলেন, “তানভীর হুদার রাজনীতি জনতার সঙ্গে হৃদয়ের বন্ধন তৈরি করেছে। তার জনপ্রিয়তা উপেক্ষা করে মনোনয়ন দেওয়া মানে জনগণের অনুভূতিকে অবহেলা করা।”
মতলব উত্তর উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন আমু বলেন, “তানভীর হুদা ছিলেন আমাদের আন্দোলনের ফ্রন্ট লাইনে। আমাদের প্রত্যাশা দল জনগণের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেবে। বিএনপি জনগণের দল, তাই জনগণের কণ্ঠস্বরকে গুরুত্ব দিতে হবে।”
ছেংগারচর পৌর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “তরুণ প্রজন্ম তানভীর হুদার মধ্যে নতুন নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি দেখে। তার মনোনয়ন মানেই তরুণদের উচ্ছ্বাস, ভোটের মাঠে উদ্দীপনা।”
কেকে/ আরআই