কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীদের নাম কেটে দালালদের মাধ্যমে সচ্ছল ব্যক্তিদের নাম দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাইদুল ইসলাম জাহিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের কার্যালয় দালালমুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানান, তারা অনেক আগে থেকেই বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা নিয়মিত পেতেন। চলতি বছরের প্রথম দিকে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ভাতাভোগীদের অনেকের বিকাশ নম্বরে টাকা আসেনি। ওই সময়ে সুবিধা বঞ্চিতরা উপজেলা সমাজসেবা অফিসে আসলেও সব নাম ঠিক করে দেওয়ার আশ্বাস দেন বর্তমান উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তবে, সাবেক কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিনকে দোষারোপ করছেন ওই কর্মকর্তা। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা দিনের পর দিন সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেও মেলেনি কোন সমাধান। প্রায় এক বছর থেকে ভাতা বঞ্চিতরা প্রতিদিন সমাজসেবা অফিসে গেলে তাদেরকে বিদায় করে দেওয়া হচ্ছে সুকৌশলে। এ কারণে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের টাপুরচর আশ্রয় কেন্দ্র এলাকায় একই পরিবারের একাধিক সচ্ছল ব্যক্তিকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভাতা দেওয়া দিয়েছেন ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাইদুল ইসলাম জাহিদ। এদের মধ্যে রয়েছেন নুর জাহান, জাহানারা, কহিনুর, রশিদা, কলিম উদ্দিন, ওয়াহেদ আলী, ইউনুস আলী, বাদশা মিয়া ও রমজান আলীসহ অনেকের নাম। তাদেরকে দেওয়া হয়েছে নিয়মিত ভাতার টাকা। শুধু তাই নয়, কারও কারও মোবাইল সিম নম্বরও সংগ্রহে রেখেছেন ওই ইউনিয়ন সমাজকর্মী। এছাড়াও উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে সমাজকর্মী জাহিদ কৌশলে তাদের বাসায় ও বিভিন্ন নিরাপদ স্থানে গিয়ে চুক্তি করেন। অর্থের বিনিময়ে কাটা নামগুলো চূড়ান্ত করে সচ্ছলদের দেওয়া হচ্ছে ভাতার টাকা।
অপরদিকে, নিয়মিত ভাতা পেলেও বছর খানেক আগে নাম কেটে দেওয়া হয়েছে জন্মগত প্রতিবন্ধী রহম আলীর। তার মত অসংখ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নাম কেটে দিয়েছেন সমাজসেবা কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন সমাজকর্মী। একই কায়দায় শত শত বয়স্ক ও বিধবা ব্যক্তির নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। যারা প্রায় এক বছর আগে থেকে এই ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ভাতা বঞ্চিতরা প্রতিদিন সমাজসেবা অফিসে নামের জন্য ভিড় করছেন। সমাজসেবা কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ভাতা বঞ্চিতদের সুকৌশলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। তা ছাড়াও স্বামী বেচে থাকলেও অর্থের বিনিময় মুঞ্জুয়ারা খাতুন, সুফিয়া খাতুন ও ফালানি খাতুনসহ অসংখ্য নারীকে বিধবা সাজিয়ে ভাতার নাম দেওয়া হয়েছে।
জন্মগত প্রতিবন্ধী রহম আলী বলেন, ‘আমি আগ থেকেই প্রতিবন্ধী ভাতা পাই। গত বছর থেকে টাকা পাই না। শুনেছি স্যারেরা নাম কেটে দিছে। তারা আশ্বাস দিছে, আমার নামটা করে দিবে।’
তিনি জানান, এ কথা যেন কাউকে না বলি।
অভিযুক্ত রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী জাইদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘এগুলো আমি করিনি।’
এ বিষয়ে (স্যারের) সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি।
রৌমারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনাটি আমি যোগদানের আগের। তাই এ বিষয়ে কিছু জানি না। অফিসে যারা আসছে, তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে সমস্যার সমাধান করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সচ্ছল ব্যক্তির নামে প্রতিবন্ধী ভাতার নাম থাকলে তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাদ দেওয়া হবে। এছাড়া ভাতা বঞ্চিতরা নতুন করেও আবেদন করতে পারবেন।’
তবে, ভুক্তভোগীদের দালাল এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
কুড়িগ্রাম জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক একেএম মনিরুজ্জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও রিসিভ করেননি তিনি।
কেকে/এমএ