রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে। বিকাল ৫টা থেকে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কেন্দ্রীয়ভাবে ফল গণনা শুরু হবে।
দীর্ঘদিন পর এ নির্বাচন হওয়ায় উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী, প্রার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। ক্যাম্পাসজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। রাকসুতে ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। সেখানে আছে আটটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ছাত্রদল সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম এবং ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্মিলত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের মধ্যে, এমন আভাস দিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পদের প্রার্থীরাও।
তাদের আরও অভিমত, অনেক পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন প্যানেলের আলোচিত বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন, যারা এবারের রাকসুতে চমক দেখাতে পারেন। তাদের মধ্যে সাবেক সমন্বয়কদের ‘আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেল’-এর জিএস প্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মারসহ আলোচনায় আছেন আরও কয়েকজন। এছাড়া রাকসুর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছেন, যারা ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখ হিসাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয়।
ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৭টি ভোটকেন্দ্রের ৯০৯টি বুথে একটানা ভোটগ্রহণ হবে। ভোটগ্রহণ শেষে পরবর্তী ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ওএমআর মেশিনে গণনার পর ফল ঘোষণা করা হবে। ভোটকেন্দ্রে থাকছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
এদিকে রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে বুধবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বহিরাগত ও যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ। বুধবার সকালে সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোটগ্রহণকালীন ও পরবর্তী নিরাপত্তাব্যবস্থার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। অন্যদিকে ভোটগ্রহণের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করেছেন রাকসু নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. এফ নজরুল ইসলামসহ প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী রাকসুর ২৩টি পদের বিপরীতে ২৪৭ জন, প্রতিটি হল সংসদের ১৫টি করে ১৭টি হলের ২৫৫টি পদের বিপরীতে ৫৯৭ জন, সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধির ৫টি পদের বিপরীতে ৫৮ জনসহ ২৮৩ পদের জন্য রেকর্ডসংখ্যক ৮৬০ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক নজরুল ইসলামের দাবি, অতীতের ১৪টি রাকসু নির্বাচনের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, রাকসু-২০২৫-এ সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন।
কমিশনের হালনাগাদ রেকর্ডপত্র অনুযায়ী এবারের রাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৫ জন, যা মোট ভোটারের ৬০ দশমিক ৯ ভাগ। অন্যদিকে নারী ভোটারের সংখ্যা ১১ হাজার ৩০৬ জন, যা মোট ভোটারের ৩৯ দশমিক ১ ভাগ। সূত্রমতে, মোট ভোটারের মধ্যে ৯ হাজার ২৫১ জন আবাসিক এবং ১৯ হাজার ৬৫০ জন অনাবাসিক শিক্ষার্থী, যা মোট ভোটারের ৬৮ শতাংশ।
রাকসুতে ভিপি পদে ১৮, জিএস পদে ১৩ এবং এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী রয়েছেন। একজন ভোটারকে ৪৩টি পদে ভোট দিতে হবে। ভোটার একটি ভোট দিতে পাবেন মাত্র মাত্র ১৪ সেকেন্ড সময়। সেক্ষেত্রে সব ভোট দিতে একজন ভোটার পাবেন ১০ মিনিট সময়। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক পারভেজ আজহারুল হক জানান, একজন ভোটার বুথের ভেতরে ১০ মিনিটের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না। ভোটগ্রহণের মোট সময়কে হিসাব করেই এই সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেকে/এআর