বাগেরহাটের চিতলমারীতে সিলগালা থাকা সত্ত্বেও মিম সার্জিক্যাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অবৈধভাবে সিজার অপারেশন করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. মারুফা নাসরিন। অপারেশনে গুরুতর আহত ঐ প্রসূতি মুর্শিদা বেগম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মুর্শিদাকে খুলনা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছিল। কিন্তু দালালের মাধ্যমে ডা. মারুফা তাকে নিয়ে যান সিলগালা করা মিম ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে এবং সেখানে সিজার অপারেশন করেন। অপারেশনের একপর্যায়ে রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান ওই চিকিৎসক।
রোগীর স্বামী রাজ্জাক শেখ বলেন, ‘সরকারি হাসপাতাল থেকে খুলনা নিতে বলেছিল। কিন্তু ডা. মারুফা আমাকে বলেন, ‘‘আমি মিম ক্লিনিকে কম খরচে অপারেশন করে দেব।’’ সেই আশ্বাসে আমরা ক্লিনিকে যাই। কিন্তু অপারেশনের পর আমার স্ত্রীর অবস্থা খারাপ হলে তিনি পালিয়ে যান। এখন আমার স্ত্রী আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। আমরা গরিব মানুষ, এর সঠিক বিচার চাই।’
অভিযোগ আছে সিলগালা থাকা সত্ত্বেও মিম ক্লিনিকে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি ও অস্ত্রোপচার চলছে। মিম ক্লিনিকে বর্তমানে অন্য রোগীও ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকালে নুর ইসলাম নামের রোগী বলেন, ‘আমি আতাইকাঠির মানুষ, এই ক্লিনিকে অপারেশন করিয়েছি, এখনও ভর্তি আছি।’
আরেক রোগী মাসুম শেখ জানান, আমার স্ত্রী অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত, তাই মিম ক্লিনিকে অপারেশন করাতে এনেছি।’
সাংবাদিক পরিচয়ে ফোনকল দিলে ডা. মারুফা নাসরিন প্রথমে ফোন কেটে দেন, পরে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাজজাদ হোসেন বলেন, ‘মঙ্গলবার মিম ক্লিনিকে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। আমি সদ্য যোগদান করেছি, তবে ক্লিনিকে ভর্তি রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থানান্তরের ব্যবস্থা নিচ্ছি। সিলগালা থাকা অবস্থায় ক্লিনিক চালানো আইনত অপরাধ, প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. আ. স. মো. মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘মিম ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক অনেক আগে থেকেই সিলগালা করা রয়েছে। সেখানে কোনো চিকিৎসা কার্যক্রম চালানোর অনুমতি নেই, অপারেশন তো দূরের কথা।’
স্থানীয়দের প্রশ্ন, একটি সিলগালা ক্লিনিকে কীভাবে মাসের পর মাস অবৈধভাবে উপজেলা ও চিতলমারী থানার ৫০ গজের ভিতর অপারেশন চলছে এবং সরকারি দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক কীভাবে সেখানে গিয়ে অস্ত্রোপচার করতে পারেন?
কেকে/ এমএ