“আমি আমার মাকে এখনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাইনি, আল্লাহ পাক যতদিন বাঁচিয়ে রাখেন, ইনশাআল্লাহ কখনো পাঠাবো না” এমন আবেগঘন ও হৃদয়স্পর্শী মন্তব্য করে সাড়া ফেলেছেন হাতিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকালে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘ হাতিয়া উপজেলা শাখার উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
ইউএনও মো. আলাউদ্দিন বলেন, “বৃদ্ধাশ্রম আমাদের মা-বাবার স্থান নয়। তারা আমাদের জীবনের আশীর্বাদ, আমাদের অস্তিত্বের উৎস। তাঁদের শেষ জীবনে আমরা যদি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও যত্ন দিতে না পারি, তাহলে আমাদের সকল অর্জনই ব্যর্থ।”
তিনি আরও বলেন, “আমার মা এখনো আমার সঙ্গে আছেন। আমি কখনোই ভাবিনি তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবো। আমার মৃত্যুর পরেও আশা করছি, আমার মাকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবে না। আমার ভাইয়েরাও একইভাবে মনে করে। আমরা বিশ্বাস করি, মা-বাবার সেবা করা আল্লাহর ইবাদতেরই অংশ। সন্তান হিসাবে তাদের প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও যত্ন দেখানো আমাদের মৌলিক দায়িত্ব।”
ইউএনও’র এই বক্তব্য শ্রোতাদের হৃদয়ে গভীর প্রভাব ফেলে। উপস্থিত অনেকেই বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তার মুখে এমন মানবিক ও পারিবারিক মূল্যবোধে ভরা বক্তব্য সমাজে নতুন অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এমন বার্তা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যাতে কেউ মা-বাবাকে কখনো বোঝা মনে না করে, বরং তাদের জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সম্মান ও ভালোবাসায় আগলে রাখে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক খোন্দকার আবুল কালাম বলেন, এমন মানবিক কর্মকর্তারাই সমাজে মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে পারেন। এই বক্তব্য শুধু একজন কর্মকর্তার নয়, এটি একজন সন্তানের কণ্ঠে উচ্চারিত শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার প্রতিফলন। ইউএনও’র এই মানবিক বার্তা সমাজে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করবে এবং সন্তানদের মাঝে প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলবে যা সমাজকে আরও সহমর্মী ও মানবিক করে তুলবে।
প্রবীণ দিবসে সংগঠনের স্লোগান ছিল, “একদিন তুমি পৃথিবী গড়েছো, আজ আমি স্বপ্ন গড়বো; সযত্নে তোমাকে আগলে রাখবো।” এই স্লোগানের সঙ্গে ইউএনও’র বক্তব্য একীভূত হয়ে দিনটির তাৎপর্য আরও গভীর করেছে।
সভায় বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ প্রবীণ নাগরিকেরা অংশগ্রহণ করেন।
কেকে/বি