রাজবাড়ী জেলার কালুখালীর কাঁটাবাড়ীয়ায় নূর-নেছা স্কুল এন্ড কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অভিযোগের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কলেজের সামনে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, ছাত্রছাত্রী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে নূর-নেছা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মাহমুদুর রশিদ ইমন, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী দীঘি আক্তার, সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী শাহিদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।
জানা গেছে, আমেরিকা প্রবাসী স্থানীয় মো. আব্দুস সালাম ২০১৫ সালে ১০০ শতাংশ জমির উপর কালুখালী মদাপুরের কাঁটাবাড়ীয়ায় তার মা নূর-নেছার নামে স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন এবং নিয়মিত প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় খরচ মিটিয়ে আসছিল। ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তিনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ৬৪ জন এবং কলেজ শাখায় ৭০ জন শিক্ষার্থীসহ ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে।
দীঘি আক্তার বলেন, ‘আমারা শুনতে পাচ্ছি- আমাদের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হবে। কিন্তু আমরা সেটা চাই না। আমরা চাই- স্কুল চলুক, স্কুলটি বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কোথায় যাব?’
স্থানীয় মান্নান শেখ বলেন, ‘কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেখানে আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু সে সাক্ষী সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না এবং সমর্থনও করি নাই। আমাদের গ্রামে যেন ওই স্কুল ও কলেজ স্থায়ীভাবে চলে। এতে আমাদের এলাকার সন্তানরা পড়ালেখা করে মানুষের মত মানুষ হবে- এটাই আমরা চাই।’
শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসী আব্দুস সালাম উনার মায়ের নামে এই স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন । আমরা উনার সাথে আগেও ছিলাম, এখনও আছি। উনি যদি সহযোগিতা নাও করে চুপ থাকুক। কিন্তু ষড়যন্ত্র করা যাবে না। কলেজ কিভাবে চালিয়ে নিতে হয়, সেটা আমরা জানি। এই কলেজকে এমপিও ভুক্তিসহ অবকাঠামগত উন্নয়নের জন্য এলাকাবাসীসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
মাহমুদুর রশিদ ইমন বলেন, ‘কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে আমার চাচা, প্রবাসে থাকেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি দেশে আসেন নাই। স্থানীয় কয়েকজন মানুষ তাকে বুঝিয়েছে, কলেজে অনেক টাকা-পয়সা আছে। সবকিছু অধ্যক্ষ একা ভোগ করছেন। এভাবে উনাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। পরবর্তী উনি আমার কাছে হিসাব চাইলে প্রতি মাসের হিসাব প্রতি মাসে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২০ আগস্টের পর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সারাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।’
‘তখন উনাকে বুঝাই- এই স্কুল এন্ড কলেজ তো আপনার মায়ের নামে, আপনি প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এটি মুছে যাওয়া না। আগামীতে নির্বাচিত সরকার আসলে হয়তো আপনি আবার দায়িত্বে আসতে পারবেন। এখন রাষ্ট্রের নিয়মানুযায়ী চলুক।’
তিনি আরও বলেন, ‘কলেজের দুইজন শিক্ষক রিয়াজ, রোকন ও নাইট গার্ড ডাবু তাকে ভুল বুঝিয়েছে। বলেছে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারছেন না, সেখানে কেন অর্থ দিচ্ছেন। সম্মানিসহ সব বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে প্রায় ১৩ মাস আমারা শিক্ষক-কর্মচারীরা কেউ কোন সম্মানি পাই না। এছাড়া আগের অনেকগুলো টাকা তার কাছে বকেয়া রয়েছে। এই বিশাল বকেয়া যেন না দিতে হয়, সে জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করতে বিভিন্নভাবে পাঁয়তারা ও ষড়যন্ত্র করছে এবং আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ করেছে।’
‘বিষয়টি জানার পর বোর্ড, সার্কেল অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ শিক্ষা অফিসে গিয়ে মৌখিকভাবে সব জানিয়েছি। এখন আমরা চাই- প্রতিষ্ঠানটা চালিয়ে যেতে এবং প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী চলুক। এতে যেন কোন প্রকার বাঁধা না আসে। পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ পরিশোধসহ আমার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
কেকে/এমএ