পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ ঘটনায় আন্দোলন চলাকালে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে শিক্ষার্থীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটেছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকাল সোয়া ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে এই ঘটনা ঘটে।
বর্তমানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ইফতেখারুল আলম মাসউদ ও প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ অনেকে জুবেরী ভবনে অবরুদ্ধ রয়েছেন। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভবনের চতুর্দিকে অবস্থান করছেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক জরুরি একাডেমিক সভায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের পর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সাবেক সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্রিত হয়ে প্রতিবাদের ঝড় তোলেন শিক্ষার্থীরা। ওই রাত ১১টা পর্যন্ত আন্দোলন চালান তারা। পর দিন শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজ শেষে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর পোষ্যকোটা বাতিলের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেন কয়েক শিক্ষার্থী।
রাতভর আমরণ অনশনের পর আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে টায়ার পোড়ায়। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় তারা উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে। এ সময় তারা উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকায় এবং সেখানে টাকা ছুড়ে মারে। এরপর তারা উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাইন উদ্দিন খানের বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এতে মাইন উদ্দিন তার বাসভবনে ঢুকতে না পারায় প্রক্টর মাহবুবর রহমানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে আবারও শিক্ষার্থীদের বাধার সম্মুখীন হয়। এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক, উপ-উপাচার্যের সাথে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি হয়। এই ধ্বস্তাধস্তিতে শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হয়েছে।
বর্তমানে উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর জুবেরী ভবনে অবরুদ্ধ রয়েছেন। অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভবনের চতুর্দিকে অবস্থান করছেন।
জানতে চাইলে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘আমি মার খেলেও আমার কারও উপর কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু পোষ্য কোটা নামেই হোক বা অন্য নামেই হোক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কোন ধরনের পোষ্য কোটা থাকবে না। প্রয়োজনে আমরা আমাদের জীবন দিয়ে দিব।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ জরে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘ইতোপূর্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মক আন্দোলন করে পোষ্য কোটার কবর রচনা করেছেন। পোষ্য কোটা ছাড়াই সার্কুলার দিয়ে রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে, ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এখন পরিকল্পিতভাবে পোষ্য কোটা সামনে নিয়ে এসে রাকসু বানচালের পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আজ বহু শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করা হয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, এই প্রজন্ম ২৪’-র গণঅভ্যুত্থান থেকে গড়ে উঠা প্রজন্ম। আমরা এই আন্দোলনে ইসলামি ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সংহতি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে প্রক্টর মাহবুবর রহমান বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য স্যারকে অবরুদ্ধ করে তার বাসায় তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে আমরা জুবেরী ভবনের লাউঞ্জে বসি। সেখানে শিক্ষার্থীরা আবারও আমাদের বাধা দেয়। আমরা ফিরে গিয়ে পুনরায় আসার পর ভবনে ঢুকার চেষ্টা করলে তারা আবারও বাধা দেয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ধাক্কাধাক্কির মধ্যেই আমার হাতের ঘড়ি ও সঙ্গে থাকা ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যায়। ধাক্কাধাক্কি হতে পারে, কিন্তু আমার হাতের ঘড়ি ও ১০ হাজার টাকা হারিয়ে যাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয়।’
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে চলতি বছরের গত ২ জানুয়ারি পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন রাবির উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। এরপর থেকেই শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একের পর এক আন্দোলন শুরু করে। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে এক জরুরি একাডেমিক কমিটির সভা ডাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একাডেমিক সভায় ১০ শর্তে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কেকে/ এমএ