বর্ষা প্রায় শেষের দিকে।পানি কমতে শুরু করেছে। এ সময় নদী, হাওর ও জলাশয়ে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধরতে জেলেরা নানা কৌশল অবলম্বন করে। তবে সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় স্পটলাইট ফিশিং নামে নতুন এক ভয়ংকর পদ্ধতিতে মাছ ধরছে মাছ ব্যবসায়ীরা। নতুন কিন্তু ভয়ংকর এ পদ্ধতি ব্যবহারে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছে উপজেলা মৎস্য অফিস।
চায়নার তৈরি স্পটলাইট দিয়ে ছোট পোনা থেকে বড় মাছ—সব ধরা পড়ছে। শক্তিশালী আলো এবং বৈদ্যুতিক তরঙ্গ ব্যবহার করে মাছকে সংজ্ঞাহীন বা অচেতন করে সহজেই শিকার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে জলজ প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত হচ্ছে, মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং মাছের উৎপাদন কমছে।
বাঞ্ছারামপুরের চরশিবপুর, রাধানগর, বাহেরচর, পাঠামারা, নিলখীসহ বিভিন্ন গ্রামে অবৈধভাবে এই পদ্ধতিতে মাছ ধরা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, একেকটি স্পটলাইট মেশিনের দাম ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। এসব মেশিন ঢাকা থেকে আনা হচ্ছে। স্পট লাইট ফিশিং পদ্ধতিতে মাছ ধরা হয় রাতে। অনেকটা চোরাগোপ্তা পদ্ধতিতে। ফলে অপরাধীদের হাতেনাতে ধরা বা তাদের ছবি তোলা বেশ কঠিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবপুর গ্রামের স্পটলাইট ব্যবহারকারী জানান, ‘এই স্পটলাইট ১০ ফুটের মধ্যে মাছ, ব্যাঙ, কাঁকড়া, এমনকি অন্যান্য জলজ প্রাণীও আটকা পড়ে। কম কষ্ট, স্বল্প পুঁজিতে লাভ বেশী। মাছ ধরতে সময়ও লাগে অনেক কম। আমরা রাতে ১/২ ঘন্টা মাছের ঘেরের কাছে এটি ব্যবহার করলে ৫/৭ হাজার টাকার মাছ ধরতে পারি।’
স্থানীয়রা বলছেন, ১০-১৫ বছর আগেও চাঁই, পলো, বরশির মতো দেশীয় উপায়ে মাছ ধরা হতো, যা পরিবেশবান্ধব ছিল। কিন্তু বর্তমানে স্পটলাইট ও কারেন্ট জালের কারণে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে।
ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মমতাজ জিন্নাত বলেন, মানুষের সচেতনতার অভাব এবং অবৈধভাবে মাছ ধরার কারণে দেশীয় মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। স্পটলাইট আধুনিক জালটি ম্যাগনেটের মতো কাজ করে। ৮/১০ ফিটের মতো জায়গার সব মাছসহ সব জলজ প্রাণী ইলেকট্রনিক শক দিয়ে সাময়িক অচেতন করে ফেলে। তখন সেগুলি ধরতে সুবিধা হয়।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদা আক্তার বলেন, ‘স্পটলাইট ইলেকট্রনিক ফিশিং জাল দিয়ে মাছ ধরার ভয়ংকর পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা গত বছর থেকেই জানি। এ বছর এর ব্যবহার আরো বেড়েছে। কারা এগুলো করছে তাদের কিছু নামও হাতে এসেছে। তবে মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমাণ অভিযানে গিয়ে হাতেনাতে তাদের ধরতে হবে। আমি বিষয়টি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তথা সহকারী কমিশনারকে অভিযান পরিচালনা করার জন্য অবহিত করেছি, কারণ এ অবৈধ কাজটি করা হয় রাতে। আমরা স্পটলাইট ফিশিং এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরীর উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি বর্তমানে যারা এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘অবৈধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে চায়না স্পটলাইট ও কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এ ধরনের মাছ শিকার জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট করবে। তাই প্রশাসনের কঠোর নজরদারি, জনসচেতনতা ও কঠোর আইনি প্রয়োগ জরুরি।
কেকে/ এমএস