নওগাঁর মহাদেবপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৩০তম ঐতিহ্যবাহী কারাম উৎসব হয়ে গেলো। আশপাশের জেলা থেকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২৫টি দল উৎসবে যোগ দিয়ে তাদের নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকালে উপজেলার নাটশাল মাঠে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা কমিটি এ উৎসবের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র রাজোয়ার। উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডী।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা। বংশপরমপরায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পূর্ণিমা তিথিতে কারাম পূজা পালন করে। পূজা-অর্চনা আর নাচ-গানের মধ্য দিয়ে যুগ যুগ ধরে প্রতি বছর উত্তরের সমতল ভূমির নওগাঁর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন এ কারাম উৎসব পালন করে আসছে।
কারাম পূজা বা ডাল পূজাও বলা হয়। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষের কাছে কারাম একটি পবিত্র গাছ। এই গাছকে মঙ্গলের প্রতীকও বলে মনে করা হয়। কারাম ডাল মাটিতে পুঁতে বিভিন্ন আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী নাচ, গান ও কিচ্ছা বলার মধ্যে দিয়ে এই পূজা করা হয়। আর এ দিনটির জন্য অধির আগ্রহে থাকেন তারা। এ পূজার মাধ্যমে সংসারে স্বচ্ছলতা ও রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকার প্রত্যাশা করেন তারা।
উপজেলার নাটশাল মাঠে নওগাঁসহ পাশবর্তী জয়পুরহাট ও নাটোর জেলা থেকে মোট ২৫ টি দল উৎসবে অংশ নেয়। এ সময় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন উৎসবে যোগ দিয়ে শিশু, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষ দলবদ্ধ ছন্দময় নাচের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভাষা সংস্কৃতি তুলে ধরে। পুরো এলাকা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সব সম্প্রদায় মানুষের হয়ে উঠে মিলন মেলা। এলাকার কারাম উৎসব উপলক্ষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী এখন মুখরিত হয়ে থাকে।
জেলার পত্নীতলা থেকে আসা অঞ্জলী খানকো বলেন, ‘কারাম আমাদের জাতীয় উৎসব এবং বংশ পরমপরায় পালন করে আসছি। এ পূজার মাধ্যমে সংসারের উন্নতি, স্বামী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকতে পারবো ঈশ্বরের কাছে এই চাওয়া।’
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী লাকী তিরকি জানায়, ঈশ্বরের কাছে চাওয়া পড়াশুনা ভাল করাসহ যেন জীবনে উন্নতি করতে পারি। এছাড়া বাবা-মা'র সেবা করা সহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি। এ উৎসবে দল বেঁধে নাচতে পেরে অনেক খুশি।
জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদ সভাপতি আমিন কুজুর বলেন, ‘১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয়ভাবে এ উৎসব পালন করা হচ্ছে। দলবদ্ধ ছন্দময় নাচের মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি তুলে ধরে। আমাদের ৯টি দাবি- আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করার দাবি জানাই।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ জেলা কমিটির সভাপতি আমিন কুজুরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান।
কেকে/ এমএ