কক্সবাজারে গত চারদিন ধরে বাঁকখালী নদী দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। শুরুতে খুরুশকুল ব্রিজের পাশে বা ব্রিজের নিচে স্থাপনা গুটিয়ে দিতে তেমন কোন বাঁধা না আসলেও এরপরে অভিযানিকদল শহরের পেশকার পাড়ার দিকে অবৈধ স্থাপনা সরাতে গেলে অবৈধ দখলদাররা বাঁধা প্রদান করে। যার কারণে সেখান থেকে বিআইডাব্লিউটিএ কর্মকর্তার পিছু হটে এবং নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থান নেয়।
আজ ৫ম দিনে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকায় নদীর অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন ও বিআইডব্লিউটি।
মূলত এ উচ্ছেদের খবরে সেখানে জড়ো হয় দখলদাররা। পরে স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে সড়ক টায়ারে আগুন দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন তারা। সবশেষ পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর চড়াও হয় বিক্ষোভকারীরা। অভিযানে নেতৃত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তার নিজস্ব গাড়িতে না এসে একটি ইজি বাইক নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ইলিয়াস খান বলেন, সকাল থেকে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা করছে। দুপুর নাগাদ তা নিয়ন্ত্রনে আসে তবে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের পশ্চিম পাশে অবস্থিত বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট একসময় ছিল প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এই ঘাট ব্যবহার করে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চলতো জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ। বর্তমানে এসবই কেবল স্মৃতি। এখানে প্রায় ৩০০ একরের বেশি প্যারাবন ধ্বংস করে ও নদী ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে দুই শতাধিক পাকা-সেমিপাকা ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। শুধু কস্তুরাঘাট নয়, নুনিয়াছাটা থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বাঁকখালী নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা।
এ পরিস্থিতিতে সোমবার বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে সরকার। পরে দ্বিতীয় দিন উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে মঙ্গলবার নদীর উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এসআই মো. জাকির হোছাইন বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে বৃহস্পতিবার আবারও উচ্ছেদে নামে প্রশাসন, সেদিনও সকাল থেকে নদীর দুটি অংশের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভ করেন দখলদাররা। কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ার ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুটি মামলার হয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার ওসি ইলিয়াস খানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ জনকে।
এ বিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, হঠাৎ করে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালানো জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয়রা নিরাপদভাবে বসতি ও উচ্ছেদ প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
কেকে/এজে