কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপিতে পছন্দের নেতা নির্বাচন করতে গিয়ে ত্যাগীদের বাদ দিয়ে আওয়ামীলীগ-জাসদকে পূর্নবাসনের অভিযোগ উঠেছে। খোদ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাজাহান আলী এমন অভিযোগ করেছেন।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন,একটি ওয়ার্ডেই বিএনপির কাউন্সিলর ৭২২ জন। আপত্তির মুখে পরে তা কমে দাঁড়ায় ৬১৯ জন। অথচ ওই ওয়ার্ডে সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি ভোট পেয়েছিল মাত্র ৯৬টি। ৫ আগষ্টের পর রাতারাতি আওয়ামীলীগ-জাসদের নেতাকর্মীরা এখন হয়ে গেছে বিএনপি। তাদের ভোটেই নির্বাচিত হচ্ছে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি-সম্পাদক। ফলে বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘদিন দল করা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,দলীয় সংস্কারের অংশ হিসাবে তৃনমূল বিএনপিকে আরো গতিশীল ও শক্তিশালী করতে বিএনপির উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় পৌর, ইউনিয়ন কমিটিসহ বাহিরচর ইউনিয়ন, চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন,বাহাদুরপুর ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ড কমিটি ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। জুনিয়াদহ, মোকারিমপুর ও ধরমপুর ইউনিয়নেরও প্রায় সকল ওয়ার্ডে কমিটি হয়েছে।
তবে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভিযোগ রয়েছে, একটি পক্ষ উপজেলা বিএনপির কমিটিতে একচ্ছত্র আধিপত্যে ধরে রাখতে কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ-জাসদের নেতাকর্মীদের দলে ভিড়িয়ে কাউন্সিলর বানানো হয়েছে। বাদ দেওয়া হয় ত্যাগী কর্মীদের। আবার ত্যাগী, নির্যার্তিত নেতারা সভাপতি-সম্পাদকের পদে প্রার্থী হলেও হারিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেক জায়গায় অবস্থা বুঝে নির্বাচন থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘটনাও রয়েছে।
ধরমপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠনের নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন সাদ আহমেদ সাদেক। নির্বাচনের একদিন আগেই তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। তিনি বলেন,এই ওয়ার্ডে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন মাত্র ১৯৯টি। অথচ এখন ওয়ার্ডে বিএনপির কাউন্সিলর ৭২২ জন। আওয়ামীলীগ ও জাসদের দোসরাই এখন বিএনপির নেতা। তার অভিযোগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে দুইজন প্রার্থী হয়েছিলেন তারা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ ও জাসদের ভোট করেছেন। যদিও এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে মাসুদকে আর মনোনয়নপত্র তুলতে দেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসনের সময়ে সব থেকে বেশী নির্যাতিত বিএনপির নেতা আলী হোসেন। সম্প্রতি ধরমপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন। তাকেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন,কৌশল খাটিয়ে আওয়ামীলীগ-জাসদকে পূর্নবাসন করা হচ্ছে। এই ইউনিয়নে বিএনপি ভোট পেয়েছিল ৯৬টি। অথচ এখন বিএনপির কাউন্সিলর ৫৫০ জন। ভূয়া ভোটার লিস্ট বারবার সংশোধনের জন্য বলেও কাজ না হলে তিনি ভোট বর্জন করেন। স্থানীয় বিএনপির বহু নেতা ওয়ার্ড কাউন্সিলে ভোটের বিষয়টিকে হাস্যকর ও প্রহসনের বলে উল্লেখ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির এক নেতা বলেন, খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। যেই আওয়ামীলীগ আর জাসদ ১৬ বছর আমাদের বিছানায় থাকতে দিল না। ঘর ছাড়া করলো। অসংখ্য গায়েবী মামলা দিয়ে নাস্তানাবুদ করলো। এখন তাদের সাথেই রাজনীতি করতে হচ্ছে। এক টেবিলে বসতে হচ্ছে। চাঁদগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জানবার হোসেন নাকে খত দিয়ে বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিল। বিএনপির বিরুদ্ধে সকল স্থানীয় ভোটে অংশ নিয়ে রাজত্ব করেছিল। সেই এখন বিএনপির বড় নেতা। শুনছি,সেই নেতা নাকি এবার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। সেই কৌশলেই ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো তাদের মনোনীত করে সাজাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ক্ষোভ নিয়ে ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাজাহান আলী বলেন, অভিযোগ শতভাগ সত্য। আওয়ামী লীগ-জাসদকে নিয়েই বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটির সম্মেলন হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমি বিরোধীতা করলেও একটি পক্ষের দাপটে পেরে উঠি নাই। জেলা কমিটিকে অভিযোগ দিলেও তারা তেমন কোন ব্যবস্থা নেইনি।
এ বিষয়ে জানতে ভেড়ামারা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ্যাড. তৌহিদুল ইসলাম আলমের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ কিংবা জাসদের কমিটিতে আছে এমন কেউ বিএনপির কোনো কমিটিতে নেই। এমনটা হতে পারে বিভিন্ন সময়ে বিগত সময়ে আ.লীগ-জাসদের নেতাদের সাথে ছবি আছে এমন কেউ থাকতে পারে। তাছাড়া দুই পক্ষের তালিকা যাচাই বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন।
কেকে/ এমএস