জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান বার্ষিকীতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আলোচনা সভায় জাতীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে বিশেষ কারও মালিকানা দাবি করা জনগণের প্রতি অবমাননার সামিল। কসমেটিক পরিবর্তন নয়, পরিবর্তনে ভিত্তিমূলে হাত দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে পারেনি। জুলাই সনদের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তালবাহানার কোন অবকাশ নেই।
শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উদ্যোগে “ফিরে দেখা রক্তঝরা জুলাই-আগস্ট প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি” শীর্ষক কথকতা অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শহিদদের প্রতি কেবল শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা দায়িত্ব শেষ করতে পারি না। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যেমন জনযুদ্ধ ছিল এবারকার গণঅভ্যুত্থান ছিল দেশের লড়াকু জনগণের ঐক্যবদ্ধ গণসংগ্রাম। বিশেষ কারো মালিকানা দাবি করা জনগণের প্রতি অবমাননার সামিল।
তারা বলেন, গত একবছরে বৈষম্য, বেকারত্ব, দারিদ্র্য কমেনি, বরং বেড়েছে। তারা বিচার ও সংস্কারের ধারায় সরকারকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।
আলাচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.আবদুল মঈন খান বলেন, দেশের মানুষকে বারে বারে কেন জীবন দিতে হবে! কারণ ইতিহাস থেকে রাজনীতিকেরা শিক্ষা গ্রহণ করেন না। তিনি বলেন, কসমেটিক পরিবর্তন করে কোন লাভ হবেনা।মূল ভিত্তিতেই পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, অন্তরের পরিবর্তনই আসল পরিবর্তন। দেশের প্রচলিত সাধারণ আইন দিয়ে নৃশংস অসাধারণ হত্যাকাণ্ডের বিচার সময়মত শেষ করা যাবে না। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে দেশের বহুমাত্রিক ঝুঁকি তত বাড়তে থাকবে।
সভার সভাপতি বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ছাত্র শ্রমিক জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও তারা অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করতে পারেনি। গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সাথে সরকারের যোজন দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে জুলাই সমঝোতা সনদ স্বাক্ষরের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কারই আর তালবাহানা করার অবকাশ নেই।তিনি রাজনৈতিক বিরোধকে সহিংস রাজনৈতিক বৈরীতায় না নিতে সবার প্রতি আহবান জানান। তিনি কেউই যাতে অনৈক্যের সুযোগ নিতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহবান জানান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও শহিদ ও আহতদের উপযুক্ত স্বীকৃতি ও পরিবারসমূহের প্রয়োজনীয় পুনর্বাসন হয়নি। জুলাই চার্টার ঘোষণার আগে সকল অংশীদারদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন।
মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বছরের পর বছর ধরে কত রক্ত ঘামে গণঅভ্যুত্থানের জমিন তৈরি হয়েছে তা অনেকেরই অজানা। অতীতের অনেক কথিত মাস্টারমাইন্ডরা শেষে ভিলেনে পরিনত হয়েছে। এটা সবার মনে রাখা দরকার।
সাংবাদিকরা বলেন, লড়াইটা ১৬ বছরের। কোন ম্যাজিকে বা মাস্টারমাইন্ডের কারণে গণঅভ্যুত্থান হয়নি। ছাত্র তরুণদের ভুমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সংগ্রাম ছিল হার না মানা জনগণের জানবাজি প্রতিরোধের বীরোচিত আখ্যান। গণঅভ্যুত্থানের বিজয়ের পর আমরা দেখতে চাই গণমাধ্যমে আরও মুক্ত ও স্বাধীন হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে কর্তৃত্ববাদী শাসনের সুযোগ থাকে না।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে এই কথকতায় অংশগ্রহণ করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লা কায়সার, জেএসডির সিনিয়র যুগ্মসচিব কামালউদ্দিন পাটোয়ারী, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সাংবাদিক বাছির জামাল, ৭১ টেলিভিশনের সিইও ও বার্তা বিভাগের প্রধান শফিক আহমেদ, বাংলা ভিসনের বার্তা বিভাগের প্রধান সিকান্দার রেমান, চেঞ্জ টিভির প্রধান আমিরুল মোমেনিন মানিক, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য বহ্নিশিখা জামালী, মীর মোফাজ্জল হোসেন মোশতাক, জুলাই যোদ্ধা জামাল সিকদার, ফায়েজুর রহমান মনির প্রমুখ।
আলোচনা সভার শুরুতে পার্টির দুই শহিদসহ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
কেকে/এজে