মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার রুপসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুপসা ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যবর্তী খেলার মাঠে দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা ও ক্ষোভ। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের অভিযোগ—এই স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছে এবং শিশুদের খেলাধুলা ও দৈনন্দিন কার্যক্রমে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনের পাশে মাঠের মাঝখানে দেয়াল নির্মাণ কাজ চলছে। এতে প্রায় ৩৫০ শিক্ষার্থী মাত্র ১৫-২০ ফুট জায়গায় গাদাগাদি করে প্যারেড ও শরীরচর্চা করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ের নামে ৩০ শতাংশ জমি রেকর্ডভুক্ত, তবে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ জমি বহু বছর ধরে খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অপরদিকে, ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয় অতীতে একই জমিতে গেট ও পাঠাগার নির্মাণ করেছিল। এবারও তারা নিজেদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে উঁচু দেয়াল নির্মাণ করেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুতফুন্নাহার বলেন, ‘আমাদের ব্যবহৃত মাঠের মাঝখানে দেয়াল তুলে মাঠের পরিসর সংকুচিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইউএনও স্যারের সঙ্গে সমন্বয় সভায় আলোচনা করেছি। তিনি বলেছিলেন, দুই বিদ্যালয়ের মাঝখানে কোনো দেয়াল থাকবে না। অথচ রাতে গোপনে দেয়াল নির্মাণ শুরু হয়।’
তিনি আরো বলেন, এতে শিশুরা ঠিকমতো খেলাধুলা করতে পারছে না। এর প্রভাব তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে পড়ছে।
বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবারের সদস্য ও সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউনুছ বলেন, এই জমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবহারাধীন। জেলা প্রশাসক পরিষ্কারভাবে বলেছেন, চারপাশে যদি সীমানা প্রাচীর থাকে, তাহলে মাঝখানের দেয়াল থাকতে পারে না। অথচ শিবালয় উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জেনেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
একাধিক শিক্ষার্থীসহ চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী মেঘা ও সুপ্তি জানায়, এই দেয়াল তুলে দেওয়ায় আমরা খেলতে পারি না। জায়গা এত কম যে খেলতে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগার ভয় থাকে। দেয়াল না থাকলে আমরা ভালোভাবে খেলতে পারতাম।
ওয়াহেদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফি উদ্দিন মহি বলেন, তৎকালীন ইউএনও ও ভূমি অফিস সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী আমরা দেয়াল নির্মাণ করছি। মূলত বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতেই এটি করা হচ্ছে।
তবে দেয়াল নির্মাণের জন্য যে জমি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি বিদ্যালয়ের নিজস্ব কি না—এই প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আমি ডিপিও-র মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়েছি, যদি চারপাশে সীমানা দেয়াল থাকে, তাহলে মাঠের মাঝখানে কোনো দেয়াল রাখা যাবে না।
স্থানীয় শিক্ষাবান্ধব নাগরিক ও অভিভাবকরা বলছেন, দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরোধ নিরসনে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত, সীমানা নির্ধারণ ও বৈধ মালিকানা যাচাই জরুরি। শিশুদের স্বাভাবিক শিক্ষা ও খেলাধুলার পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে প্রশাসনের কার্যকর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।
কেকে/এএস