রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে নিহত রজনী ইসলামের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকাল ১০টায় কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
রজনী কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা জহুরুল ইসলামের স্ত্রী। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে এস এম জুমজুম। মেয়ে জুমজুম আনতেই স্কুলে গিয়েছিলেন রজনী খাতুন। তাদের আরেক ছেলে একই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী এস এম রোহান অসুস্থ থাকায় সেদিন স্কুলে যায়নি। বড় ছেলে এস এম রুবাই অন্য একটি কলেজ থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছেন।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই দশক ধরে জহুরুল ইসলাম ঢাকায় থাকেন। জহুরুল ইসলাম পেশায় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় জানাজা শেষে দশটার দিকে গ্রামের গোরস্থানে রজনীর লাশ দাফন করা হয়েছে। জানাজাতে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রজনীর লাশ ঢাকার সামরিক হাসপাতাল থেকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। রাত দশটার দিকে পরিবার লাশ নিয়ে দৌলতপুরের গ্রামের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। ভোরে পার্শ্ববর্তী মেহেরপুরের গাংনি উপজেলার বাওট গ্রামে রজনীর বাবার বাড়িতে লাশ নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ রাখার পর লাশ সকাল সাতটার দিকে দৌলতপুরের বাড়িতে রাখা হয়। ঢাকা থেকে পরিবারের সব সদস্যই লাশের সাথে আসে।
গ্রামের বাড়িতে লাশ পৌঁছালে আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারা সেখানে ভিড় করেন। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে সবার চোখ ছলছল করতে থাকে। তিন ছেলে মেয়ে কাঁদছে। তাদের সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা।
পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেল, বেলা ১টার দিকে ক্লাশ শেষ করে জুমজুম ক্যান্টিনে ছিল। স্কুলে মায়ের সাথে তার দেখা হয়নি। কথাও হয়নি। বিমান দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে জুমজুমের খোঁজে পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্য স্কুলে ছুটে যান।
জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনার খবর জানার সাথে সাথে উড়োজাহাজে করে ঢাকায় আসেন। এরমধ্যে পরিবারের সদস্যরা জুমজুমকে স্কুল থেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে। কিন্তু তার মায়ের কোন খোঁজ মেলে না। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন হাসপাতালে খোঁজ করতে থাকে। একপর্যায়ে এক আত্মীয় ফোন করে জানায় রজনীর লাশ সামরিক হাসপাতালে রয়েছে। দ্রুত সেখানে ছুটে যান। একটু দূর থেকে শাড়ী দেখে চিনতে পারেন রজনীর নিথর দেহ সেটি।
তিনি আরো বলেন,‘যতটুকু দেখেছি তাতে রজনীর মাথার পেছনে আঘাত। শরীরের কোথাও পোড়া চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে বিমান দুর্ঘটনার সময় বিমানের কোন অংশ তার মাথায় আঘাত লেগেছে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মেনে নেওয়া যায় না। আবার না মেনেও উপায় নেই।’
জহুরুল ইসলামের বড় ভাই আহসানুল ইসলাম বলেন, রজনী তিন ছেলেমেয়ের পড়াশোনার বিষয়ে খুবই আন্তরিক ছিল। মেয়েকে (জুমজুম) ক্লাশ থেকে আনতে গিয়েই দুর্ঘটনার পড়ে যায়। তার মাথার পেছনে খত দেখা গেছে।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল হাই সিদ্দিকী বলেন,‘সকাল দশটার দিকে লাশ দাফন হয়েছে। নিহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় শোক চলছে। একটা পরিবারে যে ক্ষতি হল সেটা কখনোই পূরণ হবার না। মায়ের কোন বিকল্প হতে পারে না। সন্তানেরা যাতে ভালো থাকে সেই দোয়া করা হয়েছে।’
কেকে/এআর