দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সংরক্ষিত এলাকার বাইরে ডাম্পিং এলাকায় কুড়িয়ে পাওয়া পরিত্যাক্ত এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বিস্ফোরণে এক শিশুর ডান হাতের কব্জি উড়ে গেছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুর ১২টায় বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সংলগ্ন চৌহাটি গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
আহত শিশুর নাম ইলিয়াস আলী (১২)। সে স্থানীয় সালাফিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসার নাজেরা শ্রেণির শিক্ষার্থী ও চৌহাটি গ্রামের বাসিন্দা মো. আশরাফুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ইলিয়াস কয়লাখনির ডাম্পিং এলাকা থেকে সে একটি ধাতব বস্তু পেয়ে কৌতূহলবশত তা নাড়াচাড়া করে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মোবাইলের নষ্ট ব্যাটারির সাথে সংযোগ দিলে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে তার ডান হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত হয়। পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বেশিরভাগ শিশু কিশোরদের কাছে এসব ডেটোনেটর রয়েছে। তারা এসব দিয়ে খেলা করে। অনেক সময় আগুনে ছুড়ে পটকা বা আতশবাজি ফুটায়।
জানা যায়, কয়লা খনির প্রাচীর ঘেঁষে তার কাঁটা দিয়ে ঘেরা খনির ডাম্পিং এরিয়া। এখানে খনির বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলা হয়। এসব বর্জ্য থেকে কয়লার সন্ধানে এলাকার লোকজন ওই ডাম্পিং এরিয়ায় প্রবেশ করে কয়লা কুড়িয়ে থাকে। এসব বর্জ্যর সাথে মাঝে মাঝে মেলে ডেটোনেটর। শিশুরা ডেটোনেটর সম্পর্কে কিছু জানে না। অনেক সময় এসব বাড়িতে ফেলে রাখে। অনেকে খেলা করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ভূগর্ভস্থ একজন শ্রমিক বলেন, এগুলো ডেটোনেটর। খনির অভ্যন্তরে বা ভূগর্ভে যেসব স্থানে মেশিন দিয়ে কয়লা কাটা সম্ভব হয়না। সেইসব স্থানে ডেটোনেটর স্থাপন করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়লা সংগ্রহ করা হয়।
শিশুর কব্জি বিচ্ছিন্নের ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা দাবি তুলেছেন, এমন বিপজ্জনক বোমা খনি কর্তৃপক্ষ কিভাবে খোলা আকাশের নিচে ফেলতে পারে। তাদের উদাসিনতায় একটি ছেলের অঙ্গহানি ঘটলো এর দায় খনি কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এসব দ্রব্য কিভাবে সহজেই মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে সেটাও উদ্ঘাটন করা দরকার।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক জানান, এটি ডেটোনেটর। খনির ভূগর্ভে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে বিস্ফোরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। এগুলো খুবই স্পর্শকাতর। এগুলো কোনটি অকেজো এবং কোনটি তাজা তা সাধারণ ভাবে কেউ বুঝতে পারার কথা নয়। তাছাড়া বাহিরের প্রাপ্ত ডেটোনেটরে কোন সংযোগ নেই। তবে এগুলো ডাম্পিং পয়েন্ট থেকেই কোনো না কোনোভাবে ধাতব বস্তু হিসেবে গ্রামবাসী সংগ্রহ করেছে। বিষয়টি আগে কেউ আমাদের নজরে আনেনি। ঘটনার পর আমরা জনতে পেরে বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।
এ কর্মকর্তা আরো বলেন বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহত শিশুর বিষয় তিনি বলেন, আগে তার চিকিৎসা চলুক। পরে তার বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে এবং পাশে থাকবে।
কেকে/ এমএস