শুধু মুখে হালকা শব্দ ফোটে, ঠিকমতো ‘মা’ ডাকাও শেখেনি এখনো। বয়স মাত্র ৮ মাস। অথচ জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়েছে ফুটফুটে শিশু সোহাইবা আক্তার রাফা। জানেই না—যে মানুষটাকে ‘বাবা’ বলে ডাকবে, তিনি আর কখনো ফিরবেন না।
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর ইউনিয়নের বড় গোপালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেল রাফা মায়ের কোলে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। চারদিকে তাকিয়ে, যেন খুঁজে ফিরছে অচেনা এক মুখ—বাবা সোহেল রানাকে। মা রোকেয়া আক্তার সাম্মীর চোখজুড়ে শুধু অসহায়তা আর অনিশ্চয়তা।
জানা যায়, রোকেয়ার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুরে। বিয়ের পর তিনি পাড়ি জমান বগুড়ার নন্দীগ্রামে স্বামী সোহেল রানার বাড়িতে। কিছুদিন পর স্বামী ঢাকার একটি নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। তখন সাম্মী অন্তঃসত্ত্বা। স্বপ্নে ভরা সেই সময়েই ঘটে যায় অঘটন।
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সোহেল রানা। এরপর ৬ আগস্ট বগুড়ার ভুসকুর মাদ্রাসাপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। তখন সাম্মীর গর্ভে ৮ মাস বয়সি সন্তান। পরের মাসেই কোলজুড়ে আসে কন্যাসন্তান, যার নাম রাখা হয় সোহাইবা আক্তার রাফা।
কিন্তু রাফার জন্মের পর স্বামীর পরিবার থেকেও আসে না সান্ত্বনা। বরং অবহেলার শিকার হয়ে ফিরে আসেন বাবার ঘরে। এখন বাবা-মায়ের ভরণপোষণে দিন কাটছে সাম্মীর। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি হারিয়ে পড়েছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
এ বিষয়ে রোকেয়া আক্তার সাম্মী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, শেখ হাসিনা সরকার পতনে একদফা আন্দোলনে গিয়ে আমার স্বামী সোহেল রানা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার দুই মাস পর আমার কোলজুড়ে জন্ম নেয় কন্যা সোহাইবা আক্তার রাফা। সে এখনো বোঝে না জন্মের আগেই তার বাবাকে হারিয়েছে। যেন বাবাকে এক নজর দেখার জন্য অবাক দৃষ্টিতে ইশারা করছে এ শিশুটি।
এ ব্যাপারে রোকেয়া আক্তার সাম্মীর পিতা আব্দুস সাত্তার সরকার বলেন, গেল বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আমার মেয়েজামাই সোহেল রানা পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এরপর পর থেকে স্বামীর স্বজনদের অবহেলায় আমার বাড়িতে শিশু সন্তান নিয়ে বসবাস করছে সাম্মী।
তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে জুলাই ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্নভাবে বগুড়া জেলা থেকে সাম্মী আক্তার আর্থিক সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু গাইবান্ধা জেলা থেকে প্রশাসন কিংবা কোনো রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধি আমার মেয়ে ও ছোট নাতনির খোঁজ রাখেনি।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জুলাই যোদ্ধা-২৪ সংগঠনের সভাপতি আমিনুর রহমান বলেন, বড় গোপালপুর গ্রামের রোকেয়া আক্তার সাম্মীর ব্যাপারটি কোনোভাবেই জানা নেই। খোঁজ নিয়ে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
কেকে/এএম