পৃথিবীতে সব মানুষ সমান নয়। কিছু মানুষ জন্মগতভাবে শারীরিক কিছু ত্রুটি নিয়ে দুনিয়ায় আসে। আবার কেউ জন্মেরপর শারীরিক সমস্যায় পতিত হন। তেমনি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী পাইকপাড়া গ্রামের জামাল প্রামাণিকের ছেলে হোসেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধ ব্যক্তি। তাকে ‘নূর ওয়েলফেয়ার ফান্ড’-এর পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
হোসেনের বাবা জামাল প্রামাণিক পেশায় একজন দিনমজুর। বাড়ি বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতনী পাইকপাড়া গ্রামের পশ্চিম পাড়ায়। স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে তাদের। ২০০৩ সালে ছোট ছেলে হোসেন জন্মগ্রহণ করে। জন্মগ্রহণ করার পর সে সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল। ২০১০ সালে ভুল চিকিৎসার কারণে হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়ে। প্রথমদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে ডাক্তার দেখানো হতো এবং নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো হতো।
কিন্তু ২০২১ সালের পর তাদের পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে তখন থেকে আর হোসেনকে ওষুধ খাওয়াতে পারেনি তার পরিবার। এর মধ্যে মৌসুমী’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এসকেএম মজনু-নুল-হক পাইকপাড়া গ্রামে গেলে প্রতিবন্ধী হোসেনকে দেখতে পান। তার বাবার কাছে ছেলের করুণ পরিণতির কথা শুনে ‘নূর ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ হতে জামাল প্রামাণিককে ২৫ হাজার টাকায় একটি মুদিখানার দোকান করে দেন। সেখানে শর্ত দেওয়া হয় দোকানের লাভের একটি অংশ ‘হোসেনের’ জন্য ব্যয় করা হবে। বর্তমানে প্রতিদিন দোকান থেকে ২০০-২৫০ টাকা লাভ হচ্ছে। সেই লভ্যাংশের একটি অংশ দিয়ে হোসেনের ওষুধ ও দেখাশোনা করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে বাঙ্গাবাড়ীয়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি আতিকুর রহমান হাবিবী বলেন, আমরা অনেক সময় ভুলেই যাই প্রতিবন্ধী যেমনই হোক সে আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর বান্দা। ইসলামের দিক নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা, সাহায্য-সহযোগিতা এবং তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের কর্তব্য। বিপদে প্রতিবন্ধীর পাশে দাঁড়ানো মানবতার দাবি এবং ঈমানি দায়িত্ব।
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধী, অসহায়দের সঙ্গে অসদাচরণ বা তাদের সঙ্গে উপহাস, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ বা ঠাট্টা-মশকরা করা যাবে না। এতে আল্লাহর সৃষ্টিকে অপমান করা হয়। প্রতিবন্ধীর প্রতি দয়া-মায়া, সেবা-যত্ন, সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্য-সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা মুসলমানদের ওপর একান্ত কর্তব্য। যে ব্যক্তি প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা করেন আল্লাহ তার প্রতিও রহমত বর্ষণ করেন।
হোসেনের বাবা জামাল বলেন, আমি আগে দিন মজুরের কাজ করতাম। সারা দিনে যে আয় হয় তা দিয়ে আমার প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি। কিছুদিন থেকে আমি কাজ করতে পারছিলাম না। এতে করে সংসারে সব সময় অভাব লেগে থাকতো। আমার প্রতিবন্ধী ছেলেকেও তিন বেলা খাবার দেওয়াও আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।
কিছু দিন আগে মৌসুমী’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এসকেএম মজনু-নুল-হক স্যার আমার ছেলের কথা শুনে আমাকে একটা মুদিখানার দোকান করে দেয়। এখন প্রতিদিন দোকান থেকে যে লাভ হয় সেই টাকা দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যরা প্রতিবন্ধী ছেলেকে দেখাশোনা করি ও ওষুধ খাওয়ানো শুরু করছি। ছেলে আমার আগের চেয়ে অনেক ভালো আছে। আমি দোয়া করি আমার প্রতিবন্ধী ছেলের জন্য যিনি সহযোগিতা করছেন আল্লাহ তার মঙ্গল করুন।
প্রতিবন্ধী হোসেন কথা বলতে পারে না। এমনকি সে চলাফেরাও করতে পারে না। তার চোখের দিকে তাকালে মনে হয় অনেক না বলার কষ্ট নিয়ে সে এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে। তাকে জিঙ্গাসা করলাম কেমন আছেন লক্ষ করলাম চোখের কোণে জমে থাকা পানি গড়ে পড়ল মাটিতে। সে হয়তো বলতে পারছে না তার জন্য ‘নূর ওয়েলফেয়ার ফান্ড’ থেকে যে সহযোগিতা করা হয়েছে সেটা তার কাছে অনেক রড় প্রাপ্তি। আর হয়তো বা দোয়া করছে তাকে যারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রতি নিশ্চয় সদয় হবেন।
কেকে/এএস