বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বিএনপি রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, বিএনপির কোনো সাম্প্রদায়িক দল নয়। বিএনপি কখনো সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে না। বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু অতিতেও কখনো সেটা সফল হয় নাই, আগামীতেও হতে দেওয়া হবে না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মূল্যবোধ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম সম্প্রদায়ের, তারপরে শেখ মুজিবুর রহমান সবাইকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার জন্য বলে একটা বিভাজোনের সৃষ্টি করেছিলেন।
শুক্রবার (২০ জুন) বেলা সাড়ে ১১টা দিকে গোদাগাড়ীর গৌরাঙ্গদেব শ্রীপাট খেতুর ধাম পদির্শনে এসে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, বাংলাদেশে জাতিতে জাতিতে কোন বিভাজন নাই। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টানসহ অন্যান্য সকল জাতি একত্রে এক সাথে বসবাস করে। তারা এ দেশের অধিবাসী, এ দেশের মালিক। কারন মুসলমানরা কখনো মনে লালন করেনা এ দেশের মালিক শুধু তারাই। কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠান হিসাবে বানাতে চান না।
তিনি আরো বলেন, পতিত সরকার বাংলাদেশের মসজিদ, মন্দিরসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছিলেন। এ কারনে শেখ হাসিনা যখন পালিয়ে ছিলো তখন অনেক ইমামগণ পালিয়ে গিয়েছিলেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মসভা প্রতিষ্ঠানগুলো হবে সবার জন্য। এখানে কোন রাজনীতি হবে না। এ সকল স্থানে রাজনীতির বিশেষ কোন দলের রাজনীতি চর্চা করার কোন সুযোগ নাই বলে উল্লেখ করেন তিনি বলেন, মুসলিমরা যেমন আল্লাহর কাছে চায়, তেমনি হিন্দুরা চায় ভগবানের কাছে। সবচেয়ে বড় কথা নিজেকে অনুধাবন করতে হবে।
তিনি বলেন, কনো ধর্মই খারাপ নয় এবং কোন ধর্মই অন্যায়ের পক্ষে নয়। বাংলাদেশে কোন ধর্মের মানুষের মধ্যেই ভেদাবেদ নয়। সবাই এদেশের মানুষ।
উপস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কেউ ভারতে যাবেননা। কারন সেখানে আপনারা দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ হিসেবে দেখে। সেইসাথে বাঙাল বলে গালি দেয়।
ভারতের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভারত পুশইন করছে। তারা আসলে বাংলাদেশী না ভারতের তা বোঝা যাচ্ছেনা। ভারতে যদি অবৈধভাবে বাংলাদেশীরা বসবাস করেন তাহলে তাদেও আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। এরপর বাংলাদেশ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাবস্থা করা হবে। তা না করে ভারত পুশইন করছে। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া হবেনা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামীলীগের আমলে সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগণ। তাদের মন্দিরে হামলা হয়েছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে দেবীর গলার হার চুরি হয়েছিলো। মন্দিরের জায়গা দখল করা হয়েছিলো। সেইসাথে ভাঙ্গচুর করা হয়েছিলে মন্দির ও দেব দেবী। কিন্তু অতিতেও বিএনপি’র আমলে এই সকল সম্প্রদায়ের মানুষ সব থেকে বেশী নিরাপদে ছিলেন। তিনি বলেন, শ্রীপাট খেতুরী ধাম নিয়ে ভূলবোঝাবুঝি হয়েছিলো। আগামীতে এটা কোনভাবেই থাকবেনা। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান তার নিয়মেই চলবে বলে জানান।
তিনি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে হিন্দু ধর্মের সব বড় উৎসব দূর্গাপুজার সময় বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা পাহারা দিয়েছিলো। কারন সে সময়ে দেশে কোন পুলিশ ছিলো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে তারা পাহারা দিয়েছেন। ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের জনগণ নিরাপদে পুজা করতে পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান অতিথি বলেন, শুধু তাইনয় তারেক রহমানের নির্দেশে ৫আগস্ট কালীন সময়ে কোন আওয়ামীলীগ বা ভীন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করতে নিষেধ করেছিলেন। এ থেকে আরো স্পষ্ট যে বিএনপি কখনো সাম্প্রাদয়িকতাকে প্রশ্রয় দেয়না। এমনকি কোন প্রকান সন্ত্রাসী দখবাজে বিশ্বাস করেনা। যার করতে দল তাদের প্রতি কঠোর হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আগামীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে তিনি ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে দেশের মানুষ অত্যন্ত ভালবাসেন। এ ভালবাসা এবং দোয়ার কারনে আল্লাহর রহমতে বেগম জিয়া এখন অনেক সুস্থ্য। অথচ পতিত সরকার বেগম জিয়াকে তিলে তিলে মেরে ফেলতে চেয়েছিলো। শুধু তাই নয় তারেক রহমানকে হত্যা করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেন নাই। তারেক রহমান দ্রুত সময়ে দেশে ফিরবেন এবং দেশের মানুষের পাশে এসে সরাসরি দাঁড়াবেন বলে জানান তিনি। সেইসাথে দলের প্রতি সকল প্রকার ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, ১৩জুন গৌরাঙ্গবাড়ি খেতুর ধামে কোন প্রকার গণ্ডগোল হয়নি। রাজশাহীতে এ নিয়ে যে সংবাদ সম্মেলন এবং সেখানে উপস্থাপিত সকল কিছুই বানানো ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন তিনি। সেইসাথে গোদাগাড়ী মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এহসানুল কবির টুকু এ খেতুর ধামের একজন হিতাকাংখি এবং সহযোগি মানুষ বলে অখ্যায়িত করেন তিনি।
শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গদেব ট্রাষ্ট বোর্ড পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ন সরকারের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মন্ডলী পরিষদের সদস্য সাবেক মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য দেবাশিষ রায়, রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, জেলা বিএনপির সদস্য সদর উদ্দিন ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটন।
আরো উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির অন্তর্গত রাজপাড়া থানা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, বোয়ালিয়া থানা (পুর্ব) বিএনপির সভাপতি আশরাফুল ইসলাম নিপু, গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক আব্দুল মালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মাহবুব, গোদাগাড়ী মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এহসানুল কবির টুক, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম কুসুম, শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গদেব ট্রাষ্ট বোর্ড পরিচালনা কমিটির সম্পাদক শ্যামাপদ স্যান্যাল, ট্রাষ্টী শ্রীরাম কুমার সাহা, বাবু মন্ডল বাবু, অনুকুল কুমার ঘোষ, রাজনাথ পাল রাজু ও গোবিন্দ পাল। এছাড়াও বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের থানা, ইউনিয়ন ও পৌরসভার আহ্বায়ক, সদস্য সচিব, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/ এমএস