রাজবাড়ীর পাংশায় প্রকৃত কৃষক ছাড়াই প্রবাসী, ব্যবসায়ী, এনজিও পরিচালক, গৃহিনী, মুদি দোকানী, ভ্যান চালক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারের টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ উঠেছে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে কৃষি কর্মকর্তার বিচার দাবি করেছেন প্রকৃত কৃষকরা।
জানা যায়, উপজেলায় মোট ৪৯৯৩২জন কৃষক রয়েছে। উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার কৃষক থাকা সত্ত্বেও কৃষকদের এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশিক্ষণে কৃষকের পরিবর্তে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, এনজিও পরিচালক, গৃহিনী, মুদি দোকানী, ভ্যান চালক ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহ করিয়েছেন উপজেলা কৃষি দপ্তর। ফলে প্রশিক্ষণ থেকে বাদ পরেছে উপজেলার প্রকৃত কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক প্রদানকৃত পার্টনার কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারী কৃষক-কৃষাণীর নামের তালিকা অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অংশগ্রহণকারী ৭০ জনের মধ্যে ঠাই পেয়েছে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, এনজিও পরিচালক, গৃহিনী, মুদি দোকানী, ভ্যান চালক ও শিক্ষার্থী। প্রশিক্ষণ শেষে তাদেরকে সম্মানী বাবদ নগদ ৫০০ টাকা ও দুপুরের খাবার প্রদান করা হয়। খাবারের মধ্যে একটি ডিম ও দুই পিচ খাঁসির মাংশের বিরিয়ানীসহ একটি ২৫০মি.লি. কোমল পানীয় ছিল।
সূত্র জানায়, খাবারের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা বরাদ্দ ছিল। পাংশা বাজারের হোটেলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডিমসহ দুই পিচ খাঁসির মাংশের বিরিয়ানীর দাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। ২৫০মি.লি কোমল পানীয়র দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা। খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত ৫০০ টাকার মধ্যে ২৭০-২৮০ টাকা ব্যয় করেছেন কৃষি কর্মকর্তা। বাকি অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন।
পার্টনার কংগ্রেসে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে নিজাম উদ্দিন জানান, তিনি একজন সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। সাহিদা খাতুন জানান, তিনি একজন গৃহিনী, শামীমা নাসরিন জানান, তিনি দুইটি এনজিওর পরিচালক। রাসেল জানান, তিনি কুয়েত প্রবাসী। মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, তিনি মুদি দোকনী ও টেলিকম ব্যবসায়ী। স্বপন কুমার শাহ জানান, তিনি একজন ভ্যান চালক। হাসিবুর রহমান জানান, তিনি পাংশা সরকারি কলেজেরে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা আরো জানায়, খাবারের জন্য ৫০০ টাকা বরাদ্দের কথা তাদের বলা হয়নি। যে খাবার দিয়েছে পাংশার বাজার মূল্যে সর্বচ্চ ২০০ থেকে ২৫০টাকা দাম হবে।
জানা গেছে, পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠানে পাংশা হাজি বিরিয়ানী থেকে খাবার সংগ্রহ করা হয়েছে। হাজি বিরিয়ানীর স্বত্তাধিকারী ইউসুফ বলেন, কৃষি অফিসার আমাকে ডেকে নিয়ে খাবারের অর্ডার দিয়েছিল। একটি ডিম, দুই পিচ খাঁসির মাংশ ও একটি পানিসহ খাবারের দাম ধরা হয়েছিল ২৮০ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমরা শুধু কৃষককেই আমন্ত্রণ জানিয়েছি। ভ্যান চালক ট্যান চালক হবে কেন? এইখানে আমাদের কৃষকরা আছে। আমরা শুধু কৃষককেই দাওয়াত দিয়েছি। খাবারের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে তিনি বলেন, আপনি যেটা বলেছেন সেটা সঠিক নয়। আমাদের সরকারি যে বাজেট আছে, সেই বাজেটের মধ্যেই খাবার দিয়েছি।
জানা গেছে, এ ধরনের কংগ্রেসে প্রশিক্ষণে ফসলের কৃষকদের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি, কৃষি পণ্যের টেকসই ভ্যালুচেইন সৃষ্টি, অধিক ফলন উৎপাদন, প্রযুক্তি ব্যবহার, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলজ ও সবজি খামার গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
উল্লেখ্য: গত ২৬ মে সকালে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল এ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ এ্যান্ড রেসিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (পার্টনার) প্রোগ্রামের আওতায় পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উক্ত পার্টনার কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
কেকে/এআর