চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট আয়োজিত এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে নারীসহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। সংঘর্ষের সময় এক নারী নেত্রীকে লাথি মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় তুলেছে।
বুধবার (২৮ মে) বিকালে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মুক্তির প্রতিবাদ ও রাজশাহীতে ছাত্রজোটের মিছিলে হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে এ ঘটনা ঘটে। গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট দাবি করেছে, ‘অ্যান্টি শাহবাগ মুভমেন্ট’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক ছাত্রজোটের নারী কর্মীকে লাথি মারছেন। তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি।
গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা দাবি করেন, ওই হামলাকারীর নাম আকাশ চৌধুরী, যিনি সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং ছাত্রশিবিরের কর্মী।
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলাকারী ইতোপূর্বে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রশিবিরের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই।
তবে মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে ওই যুবকের কয়েকটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সহসভাপতি পুষ্পিতা নাথ বলেন, শিবিরের নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। এতে আমাদের ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন গুরুতর আহত হন। আহতদের চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে নারীকে লাথি মারা হয়েছে তিনি গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এ্যানি চৌধুরী। যিনি মেরেছেন তিনি ছাত্রশিবিরের কর্মী।
এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় নগরের লাভলেইনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
এ সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বলা হয়, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এ টি এম আজহারকে নির্দোষ ঘোষণা করায় এবং রাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ মিছিলে ছাত্রশিবিরের হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রশিবিরের সংঘবদ্ধ হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারী ও নারী হেনস্তাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে প্রেস ব্রিফিং করা হবে।
এদিকে এ ঘটনায় ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার প্রচার সম্পাদক সিরাজী মানিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বুধবার (২৮ মে) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংঘটিত গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট ও শাহবাগবিরোধী মঞ্চের মধ্যে সংঘর্ষে এক নারী কর্মীর ওপর আক্রমণের ঘটনায় নিন্দা ও ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর।
এক যৌথ বিবৃতিতে চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল ও সেক্রেটারি মুমিনুল হক বলেন, বুধবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট এবং শাহবাগবিরোধী মঞ্চের মধ্যে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের বিষয়ে আমরা গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে অবগত হয়েছি। জানা গেছে, সংঘর্ষে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের নারী কর্মীসহ উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অনভিপ্রেত। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সংঘটিত ঘটনাটির সঙ্গে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে একটি মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। একটি ভিডিও ফুটেজে এক নারীর ওপর হামলাকারী ব্যক্তিকে ছাত্রশিবিরকর্মী বলে দাবি করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, এ হামলার ঘটনায় দৃশ্যমান ব্যক্তি ইতোপূর্বে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও দীর্ঘ দিন ধরে ছাত্রশিবিরের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। বর্তমানে তিনি ছাত্রশিবিরের কোনো পর্যায়ের নেতা বা কর্মী নন। সুতরাং এমন ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব হীন কর্মকাণ্ডের দায় ছাত্রশিবিরের ওপর চাপানো যুক্তিসংগত নয়।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, একটি আদর্শবাদী ও শান্তিপ্রিয় ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবির সুস্থ ও সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। নারীর মর্যাদা, অধিকার ও সম্মান রক্ষাকে ছাত্রশিবির সর্বদা গুরুত্ব প্রদান করে। নারীর প্রতি সহিংস মনোভাব আমাদের আদর্শবিরোধী এবং আমাদের সংগঠনের নীতিমালার পরিপন্থি। আমরা এ ঘটনার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি এবং দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তারা বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বারবার ছাত্রশিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়াস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সংশ্লিষ্ট সব মহলকে গুজব ও অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি এবং সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করছি।
কেকে/এএম