সোমবার, ১৯ মে ২০২৫,
৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
বাংলা English

সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
শিরোনাম: বিএনপি গায়ের জোরে নগর ভবনে আন্দোলন করছে: উপদেষ্টা আসিফ      ৫৪ বছরে নদীর ক্ষতি এক-দেড় বছরে সমাধান সম্ভব না: সৈয়দা রিজওয়ানা      সপ্তম বাংলাদেশি হিসেবে শাকিলের এভারেস্ট জয়      নগরভবন ব্লকেড, গুলিস্তানে যান চলাচল বন্ধ      নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টার মন্তব্য ব্যক্তিগত: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      দিনাজপুরে ট্রা‌ক-মাই‌ক্রোবা‌সের সংঘ‌র্ষে একই অফিসের নিহত ৫      নুসরাত ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ      
গ্রামবাংলা
বাঞ্ছারামপুরে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে গাইড বই বাণিজ্যের অভিযোগ
ফয়সল আহমেদ খান, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
প্রকাশ: রোববার, ১৮ মে, ২০২৫, ৭:৪২ পিএম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত গাইড বই শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক কিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, এসব বই বিক্রির পেছনে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষক। যারা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রকাশনা সংস্থার কাছ থেকে টাকা বা কমিশন পেয়ে থাকেন। শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে এমন বাণিজ্যিকীকরণ শিশুদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। শিক্ষকদের দায়িত্ব যেখানে আলোকবর্তিকা হয়ে শিক্ষার্থীদের পথ দেখানো, সেখানে যদি তারা টাকার লোভে তাদের বই বিক্রির মাধ্যম বানিয়ে ফেলেন। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর পরিণতি হবে ভয়াবহ। ফলস্বরূপ একদিকে অর্থনৈতিক চাপে পড়ছেন দরিদ্র অভিভাবকরা অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মূল পাঠ্যবই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে শর্টকাট মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনার দিকে। জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি নজরে এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি অভিভাবকদের।

শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব গাইড বই মূল পাঠ্যবই থেকে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ সরিয়ে দিচ্ছে। তারা শর্টকাট বা মুখস্থ নির্ভর হয়ে পড়ছে। এর ফলে তাদের বিশ্লেষণী ও সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে।

গাইড বই মুখস্থ নির্ভরতা বাড়ায়, পাঠ্যবই ও সৃজনশীল চিন্তা থেকে শিক্ষার্থীরা দূরে সরে যায়। এতে ভবিষ্যতে এক প্রজন্ম মেধাহীন ও নকল-নির্ভর হয়ে উঠবে। একটি শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি নৈতিকতা, দায়িত্ববোধ এবং শিশুবান্ধব পরিবেশ। অথচ সেই জায়গা থেকেই যখন বাণিজ্য ও স্বার্থপরতা জন্ম নেয়, তখন তা শুধু একটি জেলার সমস্যা থাকে না। এটি হয়ে ওঠে গোটা জাতির জন্য অশনিসংকেত।

বাঞ্ছারামপুরের ১৩৯টি বিদ্যালয়ের এ চিত্র যেন সারা দেশে চোখে আঙুল দিয়ে দেখায় শিক্ষার নামে কী ভয়াবহ অবক্ষয় চলছে। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বইয়ের দাম ১৮০ থেকে ৬৭০ টাকা পর্যন্ত, যা গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৩৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ সকল বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৪৭ হাজার ৯৩২ জন। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৪ হাজার ৪০২ জন, প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৯ হাজার ৩৪০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৯ হাজার ১৪০ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৮ হাজার ৮১০ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৮ হাজার ২১০ জন, পঞ্চম শ্রেণিতে ৮ হাজার ৩০ জন।

এ সকল বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকরা বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে পপি প্রকাশনী, লেকচার প্রকাশনী, ফুলকুড়ি প্রকাশনী, এভারেষ্ট প্রকাশনী, জুপিটার প্রকাশনী, নিউটন প্রকাশনী, সংসদ প্রকাশনীর গাইড বই নিজ নিজ বিদ্যালয়ে পাঠ্য করছেন। গাইড বইয়ের কারণে শিক্ষকরা পাঠ্যবই না পড়িয়ে গাইড বইয়ের সূচি অনুযায়ী পড়াচ্ছে। এতে করে কমলমতি শিক্ষার্থীরা পাঠ্য বইয়ের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

রূপসদী দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আতিকা সুলতানা জানান, আমাদের স্কুলের স্যার বলেছেন আমাদের গাইড কিনতে, তাই আমি এই গাইড কিনেছি ৭০০ টাকা দিয়ে। গাইড পড়লে নাকি পড়াশোনা সহজ হবে। স্যাররা গাইড বই থেকে আমাদের পড়ান।

কমলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবক ইয়ামিন মিয়া জানান, স্কুল থেকে গাইড বই কেনার কথা বলা হলে আমার মেয়ে গাইড কিনতে আমাকে বললে আমি বাঞ্ছারামপুর থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে ফুলকুড়ি একটি গাইড এনে মেয়েকে দিয়েছি। সবাই গাইড কিনছে এ কারণে মেয়েও কিনে দিতে জোর করেছে, তাই কিনে দিয়েছি। আসলে গাইড বই কখনও প্রকৃত শিক্ষা দেয় না। পাঠ্য বই মূল শিক্ষার চাবিকাঠি, শিক্ষকরা নিজেদের সুবিধার জন্য এইসব গাইড বই শিক্ষার্থীদের দিয়ে পড়াচ্ছে।

রূপসদী উত্তর বাজারের প্রভাতী লাইব্রেরির মালিক দুলাল আহমেদ জানান, গাইড বই চাহিদা থাকার কারণে আমরা গাইড বই এনে বিক্রি করি, যে গাইড বই চায় ওইটা আমরা দিই। আমি ফুলকুড়ি প্রকাশনীর এজেন্ট। আমি কোনো স্কুলে গাইড পাঠ্য করার বিষয়ে কথা বলি না। প্রকাশনীর লোকজন আছে তারা স্কুলে যায়। তবে কিছু বিদ্যালয় আছে যারা আমাদের সাথে সম্পর্কের কারণে ভালোটা নিতে বললে আমরা সেটা দিই।

একাধিক শিক্ষক জানান, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তাদের ইচ্ছামতো গাইড বই পাঠ্য করছেন, এতে করে মূল বই এর পড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা। তাদের মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে তারা শর্টকাট পড়া লেখা করার কারণে ভবিষ্যতেও তাদের নানা সমস্যায় পরতে হবে।

ফরদাবাদ মুন্সিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল জালালী জানান, আমরা কাউকে বলি না কোনো গাইড পড়তে, তবে আমাদের এখানে লেকচার ও ফুলকলি গাইড পড়ে শিক্ষার্থীরা। আমাদের কোনো চাহিদা নেই। যা টাকা দিয়েছে তা দিয়ে আমরা শিক্ষকরা মিলে খেয়ে ফেলেছি।

রূপসদী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মমতাজ বেগম জানান, আমাদের বিদ্যালয়ে ৭৭০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গাইড বই থেকে পড়াতে শিক্ষার্থীদের সহজ। কারণ এখানে সমাধান দেওয়া থাকে। বিশেষ করে ইংরেজিটা খুবই উপকার হয়, কারণ ইংরেজিটা বাংলায় লেখা থাকে। আমি কোনো নগদ টাকা নিই না। স্কুলের বিভিন্ন প্রয়োজনে ও অনুষ্ঠানের সময় লাইব্রেরির মালিক দুলালের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে থাকি।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ জানান, গাইড বই স্কুলে পড়ানোর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কেউ যদি এই ধরনের কাজে জড়িত থাকে, প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থীকে গাইড বই কিনতে বাধ্য করা যাবে না, গাইড বই কোনোভাবেই স্কুলে আনা যাবে না। মূল বই থেকে শিক্ষার্থীদের পড়াতে হবে, অন্য কোথাও থেকে পড়ানো যাবে না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি ফেরদৌস আরা জানান, গাইড বই নিষিদ্ধ কোনোভাবেই গাইড বই কেনার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দিতে পারবে না শিক্ষকরা। এমন যদি হয় বিষয়টা আমি দেখব। পাঠ্যবই থেকে পড়াতে হবে গাইড বই থেকে পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আর গাইড বই স্কুলে আনা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর কোনো শিক্ষক যদি গাইড বই কেনার বিষয়ে নির্দেশনা বা প্ররোচিত করে থাকে, সত্যতা পেলে তা বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেকে/এএম

মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বিএনপি গায়ের জোরে নগর ভবনে আন্দোলন করছে: উপদেষ্টা আসিফ
৭ দফা দাবিতে চবি ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ মিছিল
ঈদ সামনে রেখে সালথায় প্রস্তুত সাড়ে ৩ হাজার কোরবানির পশু
সাহসিকতার স্বীকৃতি পেলেন চাকা খুলে যাওয়া বিমানের ক্যাপ্টেনসহ অন্যরা
পাংশায় সরকারি জমি থেকে প্রায় অর্ধশত গাঁজা গাছ উদ্ধার

সর্বাধিক পঠিত

ফটিকছড়িতে হেলে পড়া ৭ তলা ভবনে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস
পীরগঞ্জে ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, অন্ধকারে বিভিন্ন গ্রাম
কাপাসিয়ায় জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে অন্তঃসত্ত্বা নারীকে জখমের অভিযোগ
রায়গঞ্জে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও নামসর্বস্ব এনজিও
এসএসসি পাসে ‘ডাক্তার’ সাইফুদ্দিন, ফার্মেসির আড়ালে প্রতারণা

গ্রামবাংলা- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2024 Kholakagoj
🔝
close