দীর্ঘ ১৮ বছর পর নিজ জেলা নীলফামারীতে ফিরে ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন।
শনিবার (১৭ মে) তার আগমন উপলক্ষ্যে বেলা আড়াইটার দিকে জেলা শহরের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান জেলা বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিন পর প্রিয় নেতার আগমনে জেলা বিএনপির ওই গণসংবর্ধনায় ঢল নামে নেতাকর্মীদের।
প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাগ্নে।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিন প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘এদেশে বহু অপচয় হয়েছে। গত ১৬ বছরে ওই ফ্যাসিস্ট মাফিয়া সরকার অপচয় করেছে। তারা জীবনের অপচয় করেছে, ধ্বংস করেছে দেশের অর্থনীতিকে। লুটপাট করে নিয়ে গেছে, ধ্বংস করেছে এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, আইনকে ধ্বংস করেছে। আদালতকে ধ্বংস করেছে, তারা ধ্বংস করেনি এমন কোনো সেক্টর নাই।’
এ সময় তিনি বলেন, ‘আজকে এ সরকার আসার পর সংস্কারের আওয়াজ উঠেছে এই দেশে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই সংস্কারের বিষয়ে আমাদের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান ২০২৪ সালের অনেক আগে ২০২২ সালে প্রথমে এবং ২৩ সালের জুন মাসে ৩১ দফা একটি সংস্কার প্রস্তাব আমাদের সামনে, জাতির সামনে হাজির করেছেন। আমরা চাই এই সরকারকে আমরা যেভাবে সহযোগিতা করছি, সেই সহযোগিতা দেশের আপামর জনগণ করছে। তারা বিএনপির এই সংস্কার প্রস্তাবকে সঙ্গে নিয়ে আরো অন্যান্য দলের যে সংস্কার প্রস্তাব আছে সেগুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংক্ষিপ্ত করে দেশকে একটি গণতান্ত্রিক পন্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসুক।’
এ সময় উপস্থিত নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশ্যে শাহরিন ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা কি চান দেশে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন হোক’? সকলের হ্যা সূচক জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই চাই এই দেশ পরিচালিত হোক সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। আমাদের নেতৃবৃন্দ বলছেন ডিসেম্বরের মধ্যে যাতে দেশে নির্বাচন হয়। কিন্তু আজকে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই সরকারের মধ্যেও নানাবিধ চিন্তা ভাবনা। নানাবিধ বক্তব্য শুনতে পাচ্ছি। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশেষ বিশেষ মহল বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদাগারে ব্যস্ত, কেন এতো বিষোদাগার ? এখন তারা বলে বিএনপি নাকি চাঁদাবাজি করছে। আর অন্য কোনো দল চান্দা নেয় তখন নাকি সেটা হয় হাদিয়া। ব্যাংক কারা দখল করছে আমরা শুনতে পাচ্ছি। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি, বড় বড় ব্যাংক, বড় বড় প্রতিষ্ঠান কোনো একটি দলের বিশেষ ব্যাক্তিরা দখল করেছে। সেটা কি হচ্ছে আমি জানি না’ ?
এই সরকারের সময়ে বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথায় শাহরিন ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই সরকার বলে সংস্কার করছে, এই সরকার বলে বৈষম্য দূর করছে। কিন্তু আমি তো নিজেই এই সরকারের বৈষম্যের শিকার। আমি ১৮ বছর ২ মাস পর দেশে ফিরলাম বহু দলের নেতা কর্মীরাসহ। ওই একটি বিশেষ দলের নেতা-কর্মীরাসহ। কিন্তু এই সরকারের একটি বিশেষ অর্ডারের মাধ্যমে তারা জেলে না যেয়ে জেলের স্থগিত আদেশের মাধ্যমে তারা ঘোরাফেরা করছে দেশে, রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সেটা সরকার পালন করলো না। আমি কোর্টে গেলাম, আপনারা জানেন সেটা কি হয়েছে। বৈষম্য দূর করতে তারা পারেনি। আমরা আশা করবো সরকার আরো সিরিয়াস হবে এই বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে। অন্তত নির্বাচনের ব্যাপারে সিরিয়াস হবে’।
অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সভাপতি আ,খ,ম, আলমগীর সরকারের সভাপতিত্বে বিশষে অতিথির বক্তৃতা দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম, মো. আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জহুরুল আলম প্রমুখ।
১/১১ সরকারের সময়ে দায়ের হওয়া একটি মামলায় ১৭ বছর আগে সাবেক ওই সংসদ সদস্য প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম চৌধুরী তুহিনের সাজা হয়। ওই সরকারের সময় থেকে তিনি প্রবাস জীবনযাপন করেন। পট পরিবর্তনের পর তিনি দেশে ফিরে তিনি ২৯ এপ্রিল ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ৮ মে তিনি জামিনে মুক্ত হন। সে থেকে দীর্ঘ ১৮ বছর ২ মাস পর শনিবার তিনি তার নিজ জেলা নীলফামারীতে এলে নেতাকর্মীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সংবর্ধিত হন। পরে বিকালে তাঁর নিজ উপজেলা ডোমার উপজেলা বিএনপির আয়োজনে ডোমার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
কেকে/ এমএস