লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার একটি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নিয়োগ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (১২ মে) লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের বুনচুকি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে বিষয়টি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে প্রতিকার চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের ভুক্তভোগী সহকারী শিক্ষক শাহিনা আক্তার।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, বনচুকি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরায় ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষক (জুনিয়র মৌলভী), সহকারী শিক্ষক (বিজ্ঞান), সহকারী শিক্ষক (সাধারন) ও ক্বারী শিক্ষকসহ ৫টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ০৬/০৯/২০১৪ তারিখে নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ মোতাবেক ১০/০৯/২০১৪ তারিখে মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাহিনা আক্তারকে এ প্রতিষ্ঠানে সহকারী শিক্ষক (ক্বারী) পদে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় এবং নিয়োগপ্রাপ্তির পর ৭ কার্য দিবসের মধ্যে তার পদে যোগদানের জন্য সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র প্রদান করেন। সে মোতাবেক ১৬/০৯/২০১৪ সালে এ প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে নিয়মিতভাবে চাকুরী করে আসে। গত ০৫/০২/২০১৯ সালে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের অফিস- যার স্বারক নং-০৫.৪৭.৫২০০.০০৫.০১.০৬২.১৯.৭৪(৫) তারিখ ১৬/০১/২০১৯ স্বারক মোতাবেক যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কর্মরত শিক্ষকদের যাবতীয় তথ্য ঢাকায় মাদরাসা অধিদফতরে প্রেরণ করেন। পরে ইউএনও ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে ০৫/০২/২০১৯ তারিখে মহাপরিচালক মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর বরাবরে প্রেরণ করে। তখন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের স্বার্থে শাহিনার কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন প্রধান শিক্ষক। এ টাকা প্রতিষ্ঠানে ব্যয় না করে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ আত্নসাৎ করেন বলে অভিযোগে জানা যায়। পরিবর্তী সময়ে প্রধান শিক্ষক শাহিনার নিকট আরও তিন লক্ষ টাকা দাবি করেন এবং দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে চাকুরিচ্যুত করার হুমকি প্রদান করেন। পরে বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে যে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে শাহিনাকে বাদ দিয়ে যোগ্যতাবিহীন অন্য আরেকজন শিক্ষক নিয়োগ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ভুক্তভোগী শাহিনা খাতুন বলেন, আমার বাবা দিনমজুর চাকরির আশায় সে সময় নানার বাড়ীর জমি বিক্রি করে টাকা এনে আমার বাড়িতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের হাতে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। পরিবর্তে আরও ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা না দেওয়ায় আমাকে চাকুরিচ্যুতসহ নানা হুমকি প্রদান করে। এক সময় সে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রধান শিক্ষকের দুর্নীত ও জালিয়াতির অভিযোগটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও তার চাকরির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি করেন।
বুনচুকি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিককে বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। শাহিনা নামে শিক্ষকের কাছ থেকে কোন প্রকার টাকা নেওয়া হয়নি। সে নিয়মিত মাদরাসায় না আসায় তাকে বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং ভুয়া নিয়োগপত্র ও যোগদানপত্র তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রেরণ করে এখন আমাকে হয়রানি করছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাকির হোসেন বলেন, ইতঃপূর্বে অনুদানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানদের কোন সমস্যা থাকলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল তারা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন অভিযোগ দায়ের করেছে। শাহিনা নামের শিক্ষকের অভিযোগ পেয়েছি এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেকে/এজে