ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারা

কৌশিক বোস, দিনাজপুর
🕐 ৮:০৩ অপরাহ্ণ, জুন ০১, ২০২৩

মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তারা

দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলায় সুজালপুর ইউনিয়নের কুমোরপাড়া গ্রামের সাগর পালসহ কয়েকটি পরিবার তাদের পৈতিৃক পেশা মৃৎশিল্প মাটি হাড়ি পাতিল বানিয়ে তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই পেশায় তাদের পরিবারগুলো বেঁচে রয়েছে।

 

এই পেশার সাথে জড়িত দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর ইউনিয়নের সাগর পাল (৩০) এর সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, পৈতিৃক পেশা মৃৎশিল্প বিভিন্ন কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার পরেও আমরা এই কুমার পাড়া গ্রামের ১৩টি পরিবার পূর্বপুরুষের মৃৎশিল্প হাড়ি পাতিল বানানোর কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বীরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো: আমিনুল ইসলাম তাদের হাড়ি পাতিল বানানোর কাজ সম্প্রতি পরিদর্শন করে পেশাটিকে না ছেড়ে আরো ভালোভাবে করার জন্য তাদের উৎসাহ দেন।

এমনকি তার সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রী একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প থেকে এই শিল্পের সাথে জড়িত ১৩টি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গত এপ্রিল মাসের প্রথমে তারা এই ঋণের টাকা পেয়ে হাড়ি পাতিল বানানো মৃৎশিল্প উদজ্জীবিত করতে শুরু করেছেন।

এরমধ্যে তাদের এই পেশার সাথে জড়িত ১৩টি পরিবারে সাথে আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্পের উপজেলার কর্মকর্তা খায়রুল কবীর ও মাঠ কর্মী রিনা বসাকের সাথে তাদের নিয়োমিত আলোচনা হচ্ছে। তারা এই পেশায় ভালো করতে পারলে প্রধানমন্ত্রী আমার বাড়ী আমার খামার প্রকল্প থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

এই মৃৎশিল্প সাথে জড়িত বিপুল রায় জানান, প্রয়োজনীয় মাটির অভাবে মৃৎশিল্প মুখ থুবড়ে পরতে শুরু করেছিল। কিন্তু উপজেলার চেয়ারম্যান নিজের হস্তক্ষেপে ঢেপা নদী থেকে মাটি নেয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফলে এখন তাদের মাঠির সমস্যা অনেকটা কেটে গেছে। মাটির হাড়ি পাতিল বানানোর পর তা রোদে শুকিয়ে আগুনে পুড়ে বাজার জাত করার মতো একটি দৃশ্যমান মাটির থালাবাসন অন্যান্য জিনিসপত্র দৃশ্যমান হয়। বাজারে এখনও মাটির এসব থালা বাসন, বাটনা, ঢোকসা, চাড়ী ও অন্যান্য জিনিস পত্রের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

তারা জানান, একসময়ে মেলা মানেই ছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের বিচিত্র সমাহার। শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি পাওয়া যেতে মেলায়। তবে নির্মম বাস্তবতার সঙ্গে যুদ্ধ করে এখনো কিছু কুমার পরিবার ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই ঐতিহ্য। এই ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কুমার বলা হয়। অতীতে গ্রামের সুনিপুণ কারিগরের হাতে তৈরি মাটির জিনিসের কদর ছিল অনেক বেশি। গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার করা হতো মাটির জিনিসপত্র। রান্নার হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, খাবারের সানকি, মটকি, সরা ইত্যাদি। পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে।

আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। একসময়ে মেলা মানেই ছিল মাটির তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্রের বিচিত্র সমাহার। শিশুদের খেলার রংবেরঙের মাটির পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, পালকি, পাখি, টমটম গাড়ি, ব্যাংকসহ আরও কতো কি পাওয়া যেতে মেলায়। পরিবেশবান্ধব এ শিল্প শোভা পেত গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি, জ্বালানি কাঠ, শুকনো ঘাস, খড় ও বালি। কুমাররা তাদের স্মৃতিশক্তি দিয়ে নান্দনিক সৌন্দর্যের মাধ্যমে মাটির প্লেট, গ্লাস, সানকি, জগ, মগ, চায়ের কাপ, বোল, হাঁড়ি, বাটি, ঘটি, কলস, প্রদীপসহ অনেক কিছু তৈরি করে থাকে। শুধু তাই নয় শৈল্পিক দক্ষতা ও কারুকাজ যোগ হয়েছে মৃৎপাত্র, নকশা করা হাঁড়ি-পাতিল, চাড়ি, কলসি, বদনা, খানদা, ফুলের টব, ফুলদানি, জীবজন্তু, পাখির অবয়ব, সাজসজ্জা, অলঙ্কারসহ বাংলার চিরাচরিত সব নিদর্শন এখন মৃৎপাত্রে ফুটে উঠছে।

কালের বিবর্তনে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর কমোরপুর,সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর,মোহনপুর ইউনিয়নের বড়হাট পালপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আধুনিকতার শিল্পায়নের যুগে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই মৃৎশিল্প। মাটির অভাব, বাজারে যথেষ্ট চাহিদা না থাকা, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের পরিধি পরিবর্তন না করা, কাজে নতুনত্বের অভাব, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত মাটির মূল্য বৃদ্ধি, কাঁচামাল ও উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহনে সমস্যা নানা কারণে মুখথুবড়ে পড়েছে। মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, মূলধনের অভাব, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা এবং স্বল্প আয়ের কারণে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে অনেক শিল্পী বাপ-দাদার রেখে যাওয়া এই শিল্পকে ছেড়ে ভিন্ন পেশা চলে গেছে। নতুন উদ্যোগ ও সহয়োগিতায় এই শিল্পের সাথে জড়িতরা এখন অনেক ভালো রয়েছে বলে স্বীকার করেন।

 
Electronic Paper