অন্তরালে জীবনের কথা
মনিরা মিতা
🕐 ১২:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৬, ২০২০
সাহিত্য মানুষের মানসিক আহার। মানসিক চাহিদা থেকেই এর সৃষ্টি। অন্তরক্ষুধার নিবৃত্তি হয় সাহিত্য আর শিল্প থেকে। আর সাহিত্যের মধ্যে মানুষ গল্প শুনতে ভীষণ ভালোবাসে। মানুষের ইতিহাস যেদিন থেকে শুরু হয়েছে তার গল্পের শুরুও সেদিন থেকেই। মানুষ তার পরিবেশ পরিস্থিতি, চারপাশের বৈচিত্র্য এবং বিনোদনের চাহিদা থেকেই প্রতিনিয়ত গল্পের জন্ম দেয়। ‘অন্তরালের গল্প’ বইটি লেখক প্রত্যয় হামিদের নিজস্ব ভাষাভঙ্গি ও বাস্তব জীবনের ছবি মিশ্রিত অপূর্ব এক ছোটগল্পের বই।
গল্পপ্রবাহের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাষার ব্যবহার করতে হয়েছে লেখককে। কোথাও কোথাও চমৎকারভাবে আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার করেছে তিনি।
‘কতা বুলিও না ক্যান। তুকি খুব মারিচে, লয়?’
রাজশাহী অঞ্চলের ভাষায় নিখুঁত ব্যবহার তিনি তার নাম গল্প ‘অন্তরালের গল্প’তে ব্যবহার করেছেন।
ছোট ছোট দুঃখ, কথা, অভিজ্ঞতা দিয়ে সাজানো গল্পগুলো পড়লে মনে হয় প্রতিটি গল্পই চেনা। নিজের গল্প। গল্পগুলো পড়ে নিজেকে গল্পের এক একটি চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার করে ফিরে পাবেন পাঠক। কখনো ‘কাউছার আলী’ কখনো ‘শাফিন’ কখনো ইশতিয়াক’ কখনো ‘নিহারিকা’ বলে মনে হবে নিজেকে।
লেখকের দায়িত্ব পাঠককে ধরে রাখা। গল্পের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত লেখক মোহবিষ্ট করে রাখবেন পাঠককে। পাঠক যেন ক্লান্ত না হয়, একঘেয়েমিতে না ভোগে সে দায়িত্ব লেখকের। ‘অন্তরালের গল্প’ বইটিতে লেখক তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছেন। তার প্রতিটি গল্প পাঠককে চুম্বকের মতো ধরে রেখেছে। কাহিনীর বুনোট আর বর্ণনার মুন্সিয়ানা দিয়ে পাঠককে তরতর করে টেনে নিয়ে গেছে লেখক। প্রতিটি গল্পই তাই সম্পূর্ণ গল্প হয়ে উঠেছে।
প্রতিটি গল্প পড়ার পর বইটি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। শুধু তাই নয়, গল্পগুলো শেষ হওয়ার পরও গল্পের রেশটা মনটাকে ভরিয়ে রেখেছে। গল্পকার প্রত্যয় হামিদ পাঠকের সৃষ্টি-চেতনার দ্বার খুলে দিয়েছেন। চারপাশের মানুষ তাদের ভালোলাগা, মন্দলাগা, কোমলতা, আকাক্সক্ষা ইত্যাদি প্রতিটি গল্পকে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। অনবদ্য গঠনশৈলী, সচেতনতা ও গল্পগুণের কারণে বিশ্বসাহিত্যে স্থান করে নিতে সক্ষম ‘অন্তরালের গল্প’।
একটি বিশেষ অনুভূতি অথবা মানসিক অবস্থা নিয়েও যে এত সুন্দর গল্প হতে পারে তার উদাহরণ ‘কাছে আসবে বলে’, ‘হাসি,’ ‘একটি চিঠি এবং অতঃপর’ গল্পগুলো। নিজের অনুভূতি প্রকাশের অনন্ত অনুভূতির গল্প ‘একটি চিঠি এবং অতঃপর’।
‘তুমি বলেছিলে। সেদিন ফুল ফোটাবে এই গাছ, সেদিন তুমিও আমার জন্য ফুটে উঠবে পুরোটা। তখন আমি তোমার ঘ্রাণ নিতে পারব।... গাছটা যেন একদিন পর আমাকে তোমার ঘ্রাণ উপহার দিতে পেরে হাসিতে ঝলমল করে উঠেছে।’
ভালোবাসার কী চমৎকার উপলব্ধি!
‘হাসি’ গল্প নিজিকে ছিঁড়ে-ফেঁড়ে আবিষ্কার করার গল্প। সমাজের উঁচু তলায় বসে আমরা মানবতার কথা বলি, গলাবাজি করি কিন্তু সত্যটা হলো আমরাই গরিবদের ন্যায্য অধিকার দিই না। তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি।
সমাজে অনেক জ্ঞানপাপী মুখোশের অন্তরালে ঘুরে বেড়ায়। সমাজে তাদের বহু নামডাক, খ্যাতি। সমাজের চোখে বিশাল মানব কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা নরকের কীট। নিজের স্বার্থের জন্য করতে পারে না এমন কোনো নিচ কাজ নেই। ‘ডব্লিউ ৯৩’ গল্পের ড. আহমেদ তেমনি একজন ব্যক্তি। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা শিক্ষক অথচ এক গরিবের টিকিট পর্যন্ত কৌশলে নিজের করে দিব্যি বুক ফুলিয়ে বসে এলেন ভিড়ভর্তি ট্রেনে।
অন্তরালের গল্প : প্রত্যয় হামিদ
প্রকাশক : দেশজ প্রকাশন
প্রকাশকাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২০
দাম : ২০০ টাকা
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
