ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

এগারজন ডেস্ক
🕐 ১:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ০৩, ২০২১

বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

করোনা যেসব খাতে ক্ষতিসাধন করেছে তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষাখাত। বিপর্যস্ত অর্থনীতি বাড়িয়েছে দারিদ্র্যের হার। ফলে তীব্র শঙ্কা রয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার। অনেকের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। অনেকের ছিল না অনলাইন ক্লাসের সুবিধাও। দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ; এই অপূরণীয় ক্ষতি পুনরুদ্ধার একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এমন সময়ে আসছে জাতীয় বাজেট ২০২১-২০২২। বিগত বাজেটগুলোতে শিক্ষাখাতে প্রয়োজনের তুলনায় কম বাজেট ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাখাতে এবার দরকার সর্বোচ্চ বাজেট। এই বাজেট নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা তুলেছেন অনিল. মো মোমিন

তানভীন সুইটি
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

শিক্ষা একটি জাতির দর্পণস্বরূপ। দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন অনেকাংশেই শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। যথাযথ শিক্ষাজ্ঞান ছাড়া কৃষি, সেবা, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন যে খাতই হোক না, সেটার গুণগত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। ২০২০ সালের মার্চে আকস্মিক কোভিড-১৯ এর আক্রমণে আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থা ধসে পড়েছে। ইউনেস্কো ও বিশেষজ্ঞদের মতানুসারে, কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অর্থনৈতিক সংকট, বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি, বাল্যবিবাহ, ঝরে পড়া, শিশুশ্রম ও অপুষ্টিজনিত প্রতিবন্ধকতার কারণে গত দুই দশক ধরে সারা বিশ্বব্যাপী শিক্ষাখাতের অর্জন করা অগ্রগতি বড় ধরনের বাধার সম্মুখীন হবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলকে এগিয়ে আসতে হবে। চলমান ২০২০-২১ বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল ১১.৬৯%, যদিও মোট বাজেটের ১৫%-২০% শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। আসছে বাজেট ২০২১-২১ এ শিক্ষাখাতে ১৫%-২০% বরাদ্দ দেওয়া এখন সময়ের দাবি ও আমাদের প্রত্যাশা। যাতে করে মহামারীর কারণে শিক্ষাখাতে সৃষ্ট ক্ষতিসমূহ পুষিয়ে নেওয়া যায়। তাছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ সমন্বয় ঘটাতেও শিক্ষা বাজেটের একটা নির্দিষ্ট অংশ বরাদ্দ দিতে হবে। কেননা কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে আমরা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছি যে শিক্ষাখাতে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া ছাড়া শিক্ষাখাত অসম্পূর্ণ।

ফুয়াদ হাসান
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজেট আকার বড় করলেও শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ আলাদা। উন্নত দেশগুলো তাদের বাজেটের ৩০-৩৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয় শিক্ষাখাতে, সেখানে আমাদের দেশে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট বাজেটের মাত্র ১৯ দশমিক ২ ও ১৯ দশমিক ১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় শিক্ষাখাতে। যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য নিতান্তই কম। বর্তমানে করোনার প্রভাবে দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ। অবিরত ছুটির ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের অনেকে আজ পরিবারের হাল ধরেছে, অনেকে আবার আসক্ত হয়ে পড়েছে অনলাইন গেমস-এ। দারিদ্র্যতা আর আসক্তির বেড়াজালে বন্দি এসব শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকে। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আজ হতাশা আর বেকারত্বের যাতাকলে পৃষ্ঠ। বেকারত্বের গ্লানিময় অন্ধকার ভবিষ্যতের চিন্তায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। যা দেশের মানব সম্পদ উন্নয়নের পথের অন্তরায়। শ্বাসরুদ্ধকর এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার প্রধান পথ শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বৃদ্ধি করে দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা। যেসব শিক্ষার্থী দারিদ্র্যতার কঠিন পথ পাড়ি দিচ্ছে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রধানের মাধ্যমে বিদ্যালয়মুখী করা। আর বেকারত্বের চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা।

রুকাইয়া বিনতে সুজাউদ্দিন
শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

দেশে করোনা মহামারীর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে বন্ধ হয়ে আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং যেটি প্রায় দেড় বছরের মতো সময় ধরে চলমান রয়েছে। আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাব স্পষ্ট। শিক্ষাখাতে তা মারাত্মকভাবে ফুটে উঠেছে। এমন অবস্থায় ঘোষিত হতে যাচ্ছে আমাদের বাজেট। কেমন হবে মহামারীকালীন এবারের শিক্ষা বাজেট!
করোনা মহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শিক্ষাখাতকে ঢেলে সাজানো কতটা জরুরি। এখনো পর্যন্ত সংক্রমণ থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে আমরা শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধই করে রাখছি কিন্তু এখন সেই সঙ্গে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থাপনার দিকেও জোর দিতে হবে। এই মুহূর্তে যদি শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু নাও করা যায় তাহলে যেন তারা একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
প্রতিবছর বাজেটের একটা বড় অংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় কিন্তু কার্যকরী পরিবর্তন দৃশ্যমান হয় না। তাই বরাদ্দ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাও তদারকি করা উচিত যে আমরা সেটি কতটুকু কাজে লাগাতে পারছি। পরিকল্পনা, সততা এবং বাস্তবায়নের মিশেল ঘটানো উচিত। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে সময় উপযোগী শিক্ষক তৈরি, শিক্ষার্থীদের পুনর্বাসন এসবের প্রতিফলন সম্বলিত শিক্ষা বাজেট ঘোষিত হবে বলে আশা রাখি।

মুহাম্মদ সাকিব
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

গত ৫০ বছরের ইতিহাসে কোনো একক অর্থবছর এমন দুর্যোগের মধ্যে কাটেনি যেমনটা হয়েছে সাম্প্রতিক ২০২০-২১ অর্থবছরে, অথচ আমাদের নীতিনির্ধারকগণ সেই বিষয়ে ততটা উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে না বিশেষ করে আমাদের নিমজ্জমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে। শিক্ষাখাতে টেকসই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আর প্রয়োজনের তুলনায় বাজেটের যে স্বল্পতা দেখেছি তা হতাশই করছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাখাতে বরাদ্দ ছিল ৬৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা যা মোট ব্যয়ের মাত্র ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তৎকালীন লকডাউনে স্থবির অবস্থায় ও প্রচলিত ধারার অনুবর্তী একটি বরাদ্দ ছিল এটি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বাজেটে শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকা দুর্ভাগ্যজনক। শুধুমাত্র কাক্সিক্ষত বরাদ্দই নয়, বরাদ্দকৃত বাজেট ব্যয়ে তদারকি চালানো, শিক্ষার মানোন্নয়নে গবেষণাভিত্তিক শিক্ষায় মনোযোগ দিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। করোনার ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী তথা পুরো শিক্ষা কাঠামোর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ বরাদ্দ ব্যতীত সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে শিক্ষাখাতে বরাদ্দকৃত টাকার অঙ্ক আশার বাণী শোনালেও তা মোট বাজেটের ১৩ শতাংশ মাত্র, যা দিয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো সম্ভব নয়। শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল ও আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চালাতে হলে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে আগ্রহী হয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী হয় সেদিকে নজর দিতে হবে আর এজন্যে প্রয়োজনীয় ইন্সেটিভ দেওয়া সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব। শুধুমাত্র অনলাইনে গতানুগতিক পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব নয়। অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের যাবতীয় শিক্ষা ব্যয়ের ভার গ্রহণ, বৃত্তির ব্যবস্থা করা, শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি মওকুফ করাসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা বিবেচনায় রাখতে হবে। সর্বোপরি, সবার সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের একটি মানসম্পন্ন বাজেট বরাদ্দ করবেন এমনটাই প্রত্যাশা।

খাইরুল ইসলাম দুখু
শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বাজেট হলো একটি দেশের সম্ভাব্য বছরের আয়-ব্যয়, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, উন্নয়নের রোডম্যাপ যাকে অর্থনীতির দর্পণ বলা চলে। করোনার কারণে গত বছরের বাজেটর হিসেবটা ঘাটতিতেই চুকে নিয়ে প্রস্তাবিত হতে যাচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের সম্ভাব্য বাজেট। গতবছরের শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট ৮৫ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছিল। যা ছিল বাজেটের সর্বোচ্চ; ১৫.১ শতাংশ। যদিও তাতে যুক্ত ছিল প্রযুক্তি খাতের নামে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প। গত বাজেট ঘোষণার পর করোনা মহামারীর জন্য শুধু অনলাইন কার্যক্রম ছাড়া শিক্ষা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। গতবছরে বাজেটের সময়ে স্বাস্থ্য খাতের বেহাল দশা যেমন ভাবিয়েছিল দেশের প্রত্যেক সচেতন নাগরিকদের তেমনি দীর্ঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবার ভাবাচ্ছে শিক্ষা খাত নিয়ে। ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’।
আর দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে সে মেরুদণ্ড ক্রমান্বয়ে কুঁজো ও খুড়ো হওয়ার উপক্রম। আর সে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে অবশ্যই এখন শিক্ষার দিকে সর্বোচ্চ নজর দেওয়া উচিত। বাজেটে প্রণয়ন নীতি নির্ধারকদের এ কথা মনে রাখা উচিত যে মেরুদণ্ড সোজা না হলে খুড়িয়ে খুড়িয়ে যেমন খুব বেশি দূরে যাওয়া যায়না তেমনি শিক্ষা ছাড়া একটি দেশ ও সভ্যতা কখনোই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। এমতাবস্থায় শিক্ষা খাতের নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এবার বাজেটের সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া উচিত শিক্ষা খাতে। সেই সঙ্গে সেই বরাদ্দকৃত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ে থাকতে হবে সজাগ দৃষ্টি।

 

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ


Warning: Invalid argument supplied for foreach() in /home/www/kholakagojbd.com/post/details-page.php on line 228
Electronic Paper