ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ডলার সংকট প্রকট

রোজার পণ্য আমদানি ‘বড়দের’ কবজায়

অনলাইন ডেস্ক
🕐 ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩

 রোজার পণ্য আমদানি ‘বড়দের’ কবজায়

ডলার সংকটের কারণে রোজানির্ভর পণ্য আমদানি করতে ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না। ডলারের সংস্থান করে কেবল বড় ব্যবসায়ীরা এসব পণ্যের এলসি খুলে আমদানি করছেন। এতে রোজানির্ভর পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। এ কারণে সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগও রয়েছে তাদের। স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে মূলত ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করেন। এসব স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমে প্রায় অর্ধেকে নেমেছে।

 

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সার্বিকভাবে আমদানি বাড়লেও ভোগ্যপণ্য খালাসের পরিমাণ কমে গেছে। এতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ কমেছে, বাড়ছে দাম।

এদিকে ডলার সংকট ও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেশি হওয়ায় আমদানি অর্ধেকে নেমেছে। রোজার পণ্যের আমদানি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করে ডলারের জোগান বৃদ্ধির পরামর্শ দিলেও এলসি খোলা বাড়েনি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এলসি খোলার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে তদারকি শুরু করেছে। গত ছয় মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফল ভোক্তারা পাচ্ছেন না ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে।

একই সঙ্গে রোজাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করার প্রবণতার কারণেও পণ্যের দাম বাড়ছে।

গত জুনে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৯৩ টাকা। ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭ টাকা। আলোচ্য সময়ে ডলারের দাম বেড়েছে ১৪ টাকা বা ১৫ শতাংশ। মূলত ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিতে সব খাতে খরচ বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, আসন্ন রোজা উপলক্ষ্যে চিনি, মসলা, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের এলসি খোলা কমেছে গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ। দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের আমদানি ডলারের হিসাবে সামান্য বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানি বরং কমেছে। তবে ভোজ্য তেলের আমদানি বেড়েছে।

ডাল ও ছোলার আমদানি ডলারের হিসাবে সামান্য বাড়লেও আন্তর্জাতিক দাম বৃদ্ধির তুলনায় কমেছে।

সূত্র জানায়, ভোগ্যপণ্যের বড় ব্যবসায়ীদের অনেকে রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। ফলে রপ্তানি বিল বাবদ তাদের কাছে ডলারের জোগান রয়েছে। রপ্তানিকারকরা তাদের মোট রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ রিটেনশন কোটার (বিদেশে তাদের হিসাবে জমা রাখা) আওতায় রেখে ব্যবসায়িক কাজে খরচ করতে পারেন।

ওই ডলার থেকে বড় ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলে পণ্য আমদানি করতে পারছেন। বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে যাদের রপ্তানি আয় নেই, তারা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে এলসি খুলছেন।

বড় ব্যবসায়ীরা সাধারণত চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও ইউরোপ থেকে পণ্য আমদানি করেন। ওইসব পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস করেন। এ কারণে ওই বন্দর দিয়ে সার্বিকভাবে পণ্যের খালাস বেড়েছে।

ছোট ব্যবসায়ীদের নিজস্ব রপ্তানি আয় নেই। ফলে তারা ডলার পাচ্ছেন না। ব্যাংকও তাদের ডলার দিচ্ছে না। ব্যাংকগুলো বড় ব্যবসায়ীদের ডলার দিয়ে গ্রাহক ধরে রাখছে। কারণ, তাদের কাছ থেকে ব্যবসা বেশি পাচ্ছে ব্যাংক। এ কারণে বড় ব্যবসায়ীদেরই ব্যাংক ডলার দিচ্ছে, সংকটের কারণে ছোট ব্যবসায়ীদের ডলার দিচ্ছে না।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ডলার না দেওয়ায় তারা এলসি খুলতে পারছে না। ছোট ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরের ব্যাংক থেকে এলসি খুলেন। ওইসব শাখায় ডলারের জোগান কম বলে এখন এলসি খুলতে পারছেন না। তাদের বেশির ভাগই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি করেন।

গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে পণ্য আমদানি কমে গেছে।

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে ৩০০টি আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক দেশে আসত। এখন আসছে গড়ে ১৫০টি। লালমনিরহাটের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে গড়ে প্রায় ৩৫০টি আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাক আসত। এখন তা কমে ২০০টির নিচে নেমেছে। বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়েও ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমেছে।

মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিরতার কারণে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আগে মিয়ানমার থেকে প্রায় প্রতিদিনই পেঁয়াজ, রসুন, ডাল আমদানি হতো। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ছোট ব্যবসায়ীরা নগদ বা ড্রাফট আকারে ৫০০ ডলার নিয়ে মিয়ানমার থেকে পণ্য আমদানি করতে পারতেন। অস্থিরতায় এখন সেটিও বন্ধ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ কোটি ৬৯ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ে ২ কোটি ৭৭ লাখ টন পণ্য আমদানি হয়েছিল। ডলারের দাম বাড়া এবং সরকার নিয়ন্ত্রণ করায় পণ্য আমদানি কমেছে।

এদিকে রোজার পণ্য আমদানির বিষয়টি বিশেষভাবে তদারকি শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা বিষয়টি ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে অনলাইনে তদারকি করছে। এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম অফিস থেকে স্থানীয় ব্যাংকগুলোয়ও তদন্ত হচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীদেরও এলসি খুলতে ডলারের জোগান দিতে বাধ্য করছে।

গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ট্রেজারিপ্রধান ও ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছে। ওই বৈঠকেও ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলা বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে চিনি আমদানির এলসি খোলা হয়েছিল ৪৮ কোটি ডলারের। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে খোলা হয়েছে ৩১ কোটি ডলারের। কমেছে ৩১ শতাংশ। গত অর্থবছরের ওই সময়ে চিনি আমদানি হয়েছিল ৪৫ কোটি ডলারের। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছে ৩৩ কোটি ডলারের। আমদানি কমেছে ২৬ শতাংশ।

 
Electronic Paper