ঢাকা, সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪ | ২৯ আশ্বিন ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জমিতে পানি, মুন্সীগঞ্জে বীজ আলু তুলে ফেলছে কৃষক

আপন সরদার, টঙ্গীবাড়ী (মুন্সীগঞ্জ)
🕐 ৬:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ০৯, ২০২৩

জমিতে পানি, মুন্সীগঞ্জে বীজ আলু তুলে ফেলছে কৃষক

মুন্সীগঞ্জে বীজ আলু পঁচে যাওয়ার আশঙ্কায় আলু জমিতে রোপন করা বীজ তুলে ফেলেছেন কৃষক। এই সমস্ত বীজ কাদা ও পানির নিচ হতে তুলে তা আবার বাড়িতে সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে। শুক্র ও শনিবার সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা ও টঙ্গীবাড়ী উপজেলা ঘুরে দেখা যায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে কৃষকের বিস্তীর্ণ আলু জমি। অনেক জমিতে এখনো পানি থৈ থৈ করছে। কৃষক সেচ যন্ত্র (সোলার), থালা-বাসন দিয়ে তাদের তলিয়ে যাওয়া আলুর জমিগুলো সেচার চেষ্টা করছেন। মুন্সীগঞ্জে বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী বৃষ্টি হলেও শুক্রবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বিরাজ করেছে এবং শনিবার থেকে আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়।

মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবছর মোট ৩৪ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবছর এখন পর্যন্ত ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ফেলেছে কৃষক। বাকি জমি আবাদ করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।

কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি হেক্টরে ২ হাজার ৬শ ৫০ কেজি বা ৬৬ মণের বেশি বীজ আলু লেগেছে। সে হিসাবে ১৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে প্রায় ১০ লাখ ৭০ হাজার মণ বীজ আলু রোপন করা হয়েছে। কৃষকদের হিসেবে হেক্টর প্রতি বীজ আলুতে খরচ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ বীজ আলুতে ২শ ৩৬ কোটিরও বেশি খরচ হয়েছে যা এখন পানির নিচে। বীজ ছাড়াও প্রতি হেক্টরে জমিতে এবার আলু আবাদে সার লেগেছে ১৬শত কেজি। ২২ টাকা কেজি সারের হেক্টরে খরচ ৩৫ হাজার ২শ টাকা। জমির জমা গড়ে প্রতি হেক্টর ৭০ হাজার টাকা। শ্রমিক মজুরী হেক্টরে ৩৭ হাজার টাকা আর অন্যান্য খরচ ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ হেক্টর প্রতি জমি নিয়ে চাষ করতে চাষীদের খরচ হয়েছে ৩ লাখ ২ হাজার ৯৫০ টাকা প্রায়। সে হিসাবে একদিনে বৃষ্টিতে ১৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫শ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

শুক্রবার সকালে জমির আইলে দাঁড়িয়ে তলিয়ে যাওয়া জমি দেখছিলেন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বজ্রযোগিনী গ্রামের কৃষক আবু মিয়া। তিনি বলেন, এবছর তিন কানি (৪২০ শতাংশ) জমিতে আলু আবাদ করেছিলাম। এখন সব জমি পানির নিচেআলু। সব বীজ পচে নষ্ট হয়ে যাবে। সরকার যদি আমাদের একটু সহায়তা করত, আমাদের যদি বীজ জোগাড় করে দিত, আমরা টাকা দিয়ে কিনে নিতাম। তারপরেও আমরা জমিতে আবার আলু লাগাইতে পারতাম। শুনতেছিলাম কয়েকদিন যাবত ঘূর্ণিঝড় হইবো। কিন্তু আমাদের এলাকার সবাই আলু লাগাইতাছে দেখাদেখি আমিও লাগাই ফেললাম। ভাবছিলাম কয়দিন আগে বৃষ্টি হয়েছে, এখন মনে হয় আর তেমন বৃষ্টি হইবো না। কিন্তু বৃষ্টিতে আমার সব শেষ হয়ে গেল।

মুন্সিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, মুন্সিগঞ্জ জেলায় মোট ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে রোপন করা হলেও মোট ১০ হাজার হেক্টর জমির আলু আক্রান্ত হয়েছে। এগুলো পানির নিচে আছে।

বীজ সংকটের ব্যাপারে তিনি বলেন, এখনো মুন্সীগঞ্জের হিমাগারগুলোতে বেশ কিছু আলু মজুদ আছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাছাড়া হল্যান্ড হতে আমদানিকৃত বীজও আছে। সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত বীজ সংকট দেখা দেয় কিনা এটা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

 
Electronic Paper