নাপিতকে পেটালেন ইউপি চেয়ারম্যান
চকরিয়া প্রতিনিধি
🕐 ৮:৩৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ২১, ২০২৩

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার টৈটং ইউনিয়নে খদ্দেরের চুল কাটা পছন্দ না হওয়ায় এবার নরসুন্দরকে (নাপিতকে) পিটিয়েছে বিতর্কিত ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম। এর আগেও বিভিন্ন অজুহাতে মানুষকে পিটিয়ে বারবার আলোচনায় এসেছে ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে বহিষ্কৃত হওয়া ওই চেয়ারম্যান।
গত ১৮ মার্চ রাতে এক খদ্দেরের চুল কাটার স্টাইল পছন্দ না হওয়ায় সেলুনকর্মী তপন শীলের চুল কেটে দেন চেয়ারমান জাহেদুল ইসলাম। শুধু চুল কেটেই ক্ষান্ত হননি, তিনি রাস্তায় ফেলে সেলুনকর্মী তপনকে মারধর করেন। মারধরের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। সেলুলকর্মী তপন শীল কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরং ইউনিয়নের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন,টৈটং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ। এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ক্ষমতা অপব্যবহার করে তিনি নানা ধরণের অনিয়ম করে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে কারো মুখ খোলে কথা বলারও সাহস নেই। কেউ তার বিরুদ্ধে অবস্থান করলে নেমে আসে নির্যাতন। ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অজুহাতে তিনি মানুষকে পেটান। বিপক্ষে কেউ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সাহসও পান না। প্রথম মেয়াদে চেয়ারম্যান থাকাকালীন ত্রাণের চাল আত্মসাতের দায়ে তিনি বহিষ্কৃত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ জুন টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের সামনে চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলামের নির্যাতনের শিকার হন রেজাউল করিম নামের এক যুবক। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে আসলে গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যান। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তিনি রেজাউলকে পুলিশে দেন। এমনকি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে উত্ত্যক্তের অভিযোগে তাকে তিন মাসের সাজা দিয়েও কারাগারে পাঠিয়েছিল। একই বছরের ২২ জুলাই রাতে লোহা চুরির অভিযোগে আব্দুল মোকাদ্দেস নামের এক অটোরিকশা চালককে বেধড়ক মারধর করে চেয়ারম্যান জাহেদ। আব্দুল মোকাদ্দেস ওই ইউনিয়নের আলেকদিয়া কাটা এলাকার হোসাইন আলীর ছেলে।
ভুক্তভোগী সেলুনকর্মী তপন শীল বলেন, টৈটং ইউনিয়নের হাজী বাজারের দোকানে এসে চেয়ারম্যান নির্যাতন চালালেও নিরাপত্তার ভয়ে চুপ করে আছি। আমাকে জিম্মি করে চেয়ারম্যানের লোকজন ভিডিও বক্তব্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।
পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবাইদুল্লাহ লিটন বলেন, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত না থাকলেও হুট করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বনে যান চেয়ারম্যান জাহেদ। জনপ্রতিনিধিত্ব ও রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এলাকার সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করেন তিনি। বছর খানেক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তিকে উদ্ধার করার দায়ে বাবুর্চি মাহবুবুল আলমকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন চেয়ারম্যান জাহেদ।
পেকুয়া পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুমন বিশ্বাস বলেন, এই ঘটনাটি শুনেছি। চেয়ারম্যান যে কাজটা করেছেন তা খুবই জগন্য ও অন্যায়। কারো অধিকার খর্ব করার অধিকার চেয়ারম্যানের নেই। এটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম বলেন, এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সুন্দরভাবে চুল কাটতে বলেছি। যুবকরা বিভিন্ন স্টাইলের চুল কাটায় বখাটে হয়ে যাচ্ছে। যদি এতে অন্যায় হয় তাহলে অন্যায়।
এ ব্যাপারে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ওমর হায়দার জানান, মারধরের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
