ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

জাতীয় গৃহায়নে এক কর্মকর্তাই তিন পদে

তোফাজ্জল হোসেন
🕐 ৫:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ০৫, ২০২৩

জাতীয় গৃহায়নে এক কর্মকর্তাই তিন পদে

সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে ‘জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এই সংস্থায় দায়িত্ব পালনের অপেক্ষায় থাকেন বহু কর্মকর্তা। কিন্তু পদ শূন্যের অভাবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান না কর্মকর্তারা। তবে শুধু ব্যতিক্রম প্রশাসনের ২৪তম ব্যাচের উপসচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের ক্ষেত্রে। তিনি একাই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি ঘুষ বাণিজ্যের উৎসবে মেতে উঠেছেন। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) পদ ছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সচিব এবং পরিচালক (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) পদেও দায়িত্বরত তিনি। অথচ সরকারের উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েও অনেকেই বসার স্থান পাচ্ছে না। তার এতো খুঁটির জোর কোথায়!

 

জানা গেছে, আসাদুজ্জামানের এতো দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় গৃহায়নে ব্যাপক গুঞ্জন রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদেই এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বে রয়েছেন। অথচ এসব পদই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এসব পদে পদায়নের জন্য অনেক কর্মকর্তা সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির করেন।

প্রসঙ্গত, প্রশাসনে পদের অভাবে পদায়ন পাচ্ছেন না বহু মেধাবী কর্মকর্তা। আর জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মতো আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদ মাসের পর মাস ফাঁকা রয়েছে। সংস্থাটিতে এ ধরনের নজির আগে কখনো ছিল না। অন্য সময়ে দেখা গেছে, কোনো একটি পদ ফাঁকা হলে সঙ্গে সঙ্গেই তা পূরণ হয়ে গেছে। তবে সংস্থার দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ফাঁকা থাকার পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের তৎপরতা রয়েছে বলে জানা গেছে। জাতীয় গৃহায়নে ফাইল গুনে টাকা নেয়ার কাহিনী অত্যন্ত পুরোনো। প্রতিটি ঘাটে ঘাটে নগদ অর্থ দিতে হয়। তা না হলে ফাইল নড়ে না। উপসচিব মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সেই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা। তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চিহ্নিত দুর্নীতিবাজদেরও নিজের হাতের মুঠোয় রেখেছেন। এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার কাজগুলোও তিনি নিজ দায়িত্বেই করছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৯টি বাণিজ্যিক প্লট অবৈধভাবে শ্রেণি পরিবর্তন ও বরাদ্দ দেয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ দাখিল করেছে। তদন্ত কমিটি অনিয়ম ও দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করেছে এবং তাদের নামও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বোর্ডসভায় এসব প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

সম্প্রতি ঢাকার মোহাম্মদপুরের জনৈক মো. সবুজ মিয়া জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন অনৈতক কর্মকান্ডের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দাখিল করেছেন সংস্থার চেয়ারম্যান বরাবর। অভিযোগে সবুজ মিয়া জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুরের ‘ডি’ ব্লকের ২৬/১৬ নম্বর আবাসিক প্লট ও বাড়িটি হস্তান্তরের অনুমোদনের জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। স্ত্রীসহ এ বিষয়ে পরিচালকের সঙ্গে তার কক্ষে সাক্ষাত করেন। সেই সূত্র ধরে পরিচালক আসাদুজ্জামান অসদাচরণের আশ্রয় নেন। এছাড়াও আরেকটি লিখিত অভিযোগে মিরপুরের একটি প্লটের নথিতে সরাসরি ৫০ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। লিখিত অভিযোগের পর আসাদুজ্জামান অভিযোগকারী সবুক মিয়াকে ম্যানেজ করাসহ নানাভাবে এটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন।

এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াসি উদ্দিন গতকাল দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সচিব আসাদুজ্জামান দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, আমি তিনটি পদে দায়িত্ব পালন করছি বিষয়টি ওয়েবসাইটে আছে। নিউজের বিষয়ে কথা বলতে নারাজ তিনি। তিনি বলেন, আমার মন্তব্য করার কিছু নেই।

 

 
Electronic Paper