লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা নদীর ওপর অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ। ১৯৯০ সালে ব্যারেজটি উদ্বোধন করা হয় আর সেচ প্রকল্প চালু হয় ১৯৯২ সালে। তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকায় ৭৮জন গেটকিপার রয়েছেন। তারা জমিতে পানি সরবরাহ করতে কৃষকদের সহযোগিতা করেন। এ প্রকল্প থেকে এক একর জমিতে সারাবছর সেচের পানির জন্য কৃষককে দিতে হয় মাত্র ৪৮৯ টাকা।
লালমনিরহাট জেলার কৃষক এই প্রকল্পে সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হলেও ৭৫০ কিলোমিটার খালের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের ছয় জেলা রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় স্বল্প খরচে সেচের পানি সরবরা করা হচ্ছে তিস্তা সেচ প্রকল্প থেকে। এসব জেলার এক লাখ কৃষক এ সুবিধা ভোগ করছেন। এ বছর উক্ত সেচ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো লাগানো হয়েছে। তিস্তা নদীর পানি দিয়ে ফসল ফলালে ফলন বেশি হয় এবং উৎপাদন খরচ হয় কম।
ডিমলা উপজেলর ডিমলা গ্রামের কৃষক রশিদুল ইসলাম (৬৫) বলেন, গেল ৩০ বছর ধরে তিনি এক একর জমিতে তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি দিয়ে ফসল ফলাচ্ছেন। তিস্তা নদীর পানিতে জমিত ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ কম হয়। কারন জমিতে তেমন সার ও কীটনাশক লাগে না। এছাড়া স্বল্প মুল্যে সেচের পানির সরবরাহ পাওয়া যায়। ’শিশুর জন্য মায়ের দুধ যেমন পুষ্টিকর তেমনি নদীর পানি মাটি ও ফসলের জন্য পুষ্টিকর। কারন নদীর পানিতে পলি থাকে,।’
একই গ্রামের আব্দুর রহিম (৭০) বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্পটি চালুর আগে তাদের এলাকায় জমিতে তেমন ফসল উৎপাদন হতো না। সেচের পানির প্রকট অভাব ছিলো। এখন তারা তিস্তা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবহার করে বাম্পার ফসল উৎপাদন করছেন। এ পানি দিয়ে ফসল উৎপাদন করতে প্রায় ৩০ শতাংশ উৎপাদন খরচ কম লাগে আর ফসল উৎপাদন বেশি হয় ২০ শতাংশ। এ প্রকল্পের এলাকা বৃদ্ধি করা হলে আরো অনেক কৃষক উপকৃত হতেন।
ডিমলা গ্রামে তিস্তা সেজ প্রকল্পের গেটকিপার আব্দুস সামাদ বলেন, তিস্তা সেচ প্রকল্প এলাকার জমিতে সবসময় পানি থাকার কারনে ফসলের ফলন বেশি হয়। ’আমরা সবসময় কৃষকদের জমিতে সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছি,।’
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা অমলেশ চন্দ্র রায় রায় বলেন, ৭৫০ কিলোমিটার খালের মধ্যে প্রায় অর্ধেক খালে ময়লা ও মাটি ভরাট হয়েছে। এসব খাল খনন করা হচ্ছে। আগামী বছর এক লাখ হেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার প্রস্তুতি রয়েছে। এতে দুই লাখ কৃষক স্বল্প খরচে সেচের পানির সুবিধা পাবেন। এবছর সেচের পানি সরবরাহ হচ্ছে ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে। গেল বছর জমির পরিমান ছিলো ৪৪ হাজার হেক্টর। নদীর পানিতে আবাদ করায় প্রতি হেক্টর জমিতে প্রায় এক টন ফসল বেশি উৎপন্ন হয়। কৃষকরা সারাবছরই প্রয়োজন অনুসারে সেচের পানি সরবরাহ পাচ্ছেন। তিস্তা সেচ প্রকল্প ছয় জেলার কৃষকের জন্য আর্শীবাদ।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, এ বছর শুস্ক মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৮০০ কিউসেক পানি পাওয়া যাচ্ছে। এ পানি সেচ প্রকল্পের জলাধারে রেখে খালের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচ সরবরাহ করা হচ্ছে।
কেকে/এআর