শীত মানেই উৎসবের মৌসুম। আর এ শীতে বারবিকিউ পার্টি হবে না তা কি করে হয়! হিম ঠাণ্ডায় বন্ধু-বান্ধব, ভাই-ব্রাদার বা আত্মীয়স্বজন নিয়ে সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে বারবিকিউ পার্টির মজাই আলাদা। অনেকেই মনে করেন, বারবিকিউ করা অনেক ঝামেলার কাজ। কিন্তু রেসিপি জানা থাকলে বাড়ির ছাদে বা খোলা কোনো জায়গায় আগুন জালিয়ে আপনিও সহজে তৈরি করে ফেলতে পারেন চমৎকার সুস্বাদু বারবিকিউ।
সময় বদলাচ্ছে। উৎসবগুলোতে আসছে নিত্যনতুন পরিবর্তন। শীতকাল মানেই এখন শুধু যে পিঠাপুলির উৎসব, তা কিন্তু নয়। কুয়াশা ভরা হিম শীতল বাতাসে বারবিকিউ পার্টির আনন্দটাই অন্যরকম। এ যেন এখনকার জেনারেশনের নতুন ট্রেন্ড কিংবা বলা চলে চড়ুইভাতির আধুনিক রূপ। পার্থক্য এটুকুই- চড়ুইভাতির মতো এটি দিনে নয় বরং রাতেই বেশি করা হয়।
ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে এখন বারবিকিউ পার্টি বেশ জনপ্রিয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষজনের এখন শীত উদযাপনের অন্যতম মাধ্যম বারবিকিউ পার্টি। আর তাতে পিছিয়ে নেই বরিশালের বানারীপাড়ার বাসিন্দারা। বানারীপাড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে একদম ঘরোয়া পরিবেশে বন্ধু-বান্ধব, ভাই-ব্রাদারদের সমন্বয়ে আয়োজক মো. আক্তারুজ্জামান ডলারের তত্ত্বাবধানে ঐতিহ্যবাহী ডলার ম্যানসনে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই আয়োজন করা হয়। শীত এলেই যেন সবাইকে বারবিকিউ পার্টি করতেই হবে।
বিভিন্ন সংগঠন অথবা কয়েকজন বন্ধু মিলে সহজেই এর আয়োজন করা যায়। আর এই বারবিকিউ পার্টি আয়োজনের অন্যতম স্থান ডলার ম্যানসনের পুকুর পাড়। সন্ধ্যার হরেক রঙের বাতির আলোয় আলোকিত পুকুরের মনোরম পরিবেশ চারপাশের মসৃণ সরু পথ, বসার বেঞ্চ হয়ে ওঠে শত গল্পের সূচনা। চলে আড্ডা, গান, আলোচনা, ভরা পূর্ণিমায় জোছনা বিলাস আর বারবিকিউ তৈরির কাজ।
বারবিকিউ পার্টি আসলে একটা উপলক্ষ মাত্র। বাড়ি ঘর ছেড়ে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে। ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশনসহ প্রতিদিনের নানা ব্যস্ততার ভিড়ে এসব উৎসব রোজকার ক্লান্তি দূর করে। তৈরি হয় বন্ধন, বোঝাপড়া, ভালোবাসা। পরিবারের বাইরে তৈরি হয় আরও একটি পরিবার। ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার পর এসব স্মৃতিই তো সম্বল। পাশে থেকে তারাই হয় চলার পথের এক নতুন অনুপ্রেরণা।
ছোট্ট পরিসরে এই আয়োজনে ছিলো দুই ধরনের বারবিকিউ মাঝারি সাইজের ইলিশ মাছ ও মুবগী।
বারবিকিউ তৈরির প্রধান উপকরন শিক, কয়লা ও চুলা। প্রথমেই চুলায় কয়লা বিছিয়ে অল্প পরিমাণ কেরোসিন তেল ছিটিয়ে আগুন জ্বালিয়ে নিতে হবে।
প্রথমে আস্ত ইলিশ মাছগুলোকে ভালোভাবে ধুয়ে ছুরি দিয়ে মাছের উভয়পাশে এক চিরে তেল-মসলা দিয়ে বারবিকিউ চুলায় কলাপাতার উপরে সাজিয়ে রেখে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। মাছগুলো যখন একটু পোড়া হয়ে আসবে তখন খাবার উপযোগী হয়।
মুরগী ৪ টুকরা করে কেটে, ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে এরপর ছুরি বা কাটা চামচ দিয়ে মাংসের গা একটু চিরে নেয়া হয়েছে। এর ফলে মসলাগুলো ভালোভাবে মাংসের ভেতরে ঢুকবে। তারপর সব মসলা দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করে রেখে দিতে হবে কমপক্ষে ৪-৫ ঘণ্টা। এবার শিকগুলো ধুয়ে তাতে তেল ব্রাশ করে মাংস গেঁথে নিয়ে চুলায় বসাতে হবে। এরপর শিকগুলো বারবার ঘুরিয়ে দিতে হবে ও একটু পরপর তেল ব্রাশ করতে হবে। মুরগির টুকরোগুলো যখন একটু পোড়া হয়ে আসবে তখন শিকগুলো চুলা থেকে নামিয়ে মাংসগুলো একটি প্লেটে সাজিয়ে নিতে হবে। এরপর পরোটা বা নান দিয়ে গরম গরম পরিবেশন করতে পারেন।
বারবিকিউ পার্টির আয়োজক মো. আক্তারুজ্জামান ডলার বলেন, ‘প্রতি বছরই শীতের শুরুতে পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদেরকে নিয়ে আমরা সীমিত পরিসরে বারবিকিউর আয়োজন করি। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও শীতের আগমনী উপলক্ষে ক্ষুদ্র এই আয়োজন। এর মাধ্যমে শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত বন্ধুদের মেলবন্ধনের একটি অন্যতম মাধ্যম বলে আমি মনে করি।’
কেকে/এমএ