জয়পুরহাটের রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিককার্যালয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জয়পুরহাট-১ ও জয়পুরহাট-২-এ দুইজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা দুইজনেই নতুন মুখ। নাম ঘোষণার পর থেকে সাধারণ ভোটারদের মনে স্বস্তি বাতাস বইতে শুরু করেছে।
নতুন দুই মুখ হলেন জয়পুরহাট-১ (জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি) আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ মরহুম মোজাহার আলী প্রধানের ছেলে ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মাসুদ রানা প্রধান এবং জয়পুরহাট-২ (কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুর) আসনে সাবেক সচিব মো. আব্দুল বারী।
দুই নেতার নাম ঘোষণার পর তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন তাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। রাতেই সর্বসাধারণ নতুন দুই নেতার বাড়িতে গিয়ে কুশল বিনিময় করেছেন।
নাম ঘোষণার পর থেকে নতুন সাড়া জাগে বিএনপির তৃণমূল ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। রাত থেকেই এলাকায় ভিন্নরুপে শুরু হয়েছে গণসংযোগ, কর্মিসভা ও সমাবেশ। নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘জয়পুরহাট-১ আসনে মাসুদ রানা প্রধান দলের প্রতি বিশ্বস্ত, আন্দোলনের সময় সাহসী ভূমিকা রেখেছেন এবং তার পারিবারিক রাজনৈতিক ঐতিহ্য তাকে জনগণের কাছে আরো গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।’
জানা গেছে, আগ থেকে মাঠে ছিলেন জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলিম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ রানা প্রধান, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা আনোয়ারুল হক আনু। আর জয়পুরহাট-২ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন, সাবেক সাংসদ গোলাম মোস্তফা, তিন বারের নির্বাচিত সাবেক সাংসদ আবু ইউসুফ মো. খলিলুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্বাস আলী, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ, আমিনুল ইসলাম ও আব্দুল বারী।
তাদের মধ্যে নতুন দুই প্রার্থী মাসুদ রানা প্রধান ও আব্দুল বারীর নাম ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন বঞ্চিতরা হতাশায় ভুগছেন।
তবে, মনোনয়ন না পেয়েও ফয়সাল আলিম ও এএইচএম ওবায়দুর রহমান চন্দন ফেসবুকে রাতেই মনোনয়নপ্রাপ্ত নতুন দুই প্রার্থীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
তবে, মনোনয়ন বঞ্চিত সিরাজুল ইসলাম বিদ্যুৎ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, মক্কা অনেক দূর, এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়।’
সেই সাথে সব নেতাকর্মীকে ধৈর্য ধারণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
মাসুদ রানা প্রধান বলেন, ‘আমার বাবা মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, আমিও সেই পথেই হাঁটছি। মানুষ আজও উন্নয়ন, ন্যায়ের রাজনীতি আর নিরাপত্তা চায়। আমি জনগণের বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চাই।’
আব্দুল বারী বলেন, ‘আমার পুরো জীবনের অভিজ্ঞতা মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে চাই। রাজনীতি আমার কাছে সেবার আরেকটি রূপ। কালাই-ক্ষেতলাল-আক্কেলপুরের মানুষ উন্নয়ন ও ন্যায়ের রাজনীতি চায়, আমি সেই প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটাতে চাই।’
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া গ্রামের গৃহবধূ শিল্পি আক্তার বলেন, ‘আর যাই হউক, নতুন মানুষ মনোনয়ন পাওয়ায় আমরা খুবই খুশি। আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ্য রাখেন। আমরা তাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করতে পারি।’
কালাই পৌরশহরের আঁওড়া মহল্লার বাসিন্দা মফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, ‘আমরা রাজনীতিতে এমন মানুষই চাই, যিনি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাসী। আব্দুল বারী স্যার যদি নির্বাচিত হন, এই এলাকার তরুণ সমাজ, শিক্ষাক্ষাত ও অবকাঠামো উন্নয়নে নতুন দিক উম্মোচন হবে।’
গোলজার হোসেন বলেন, ‘বিএনপি একটি বড় দল। হাইকমান্ড যাকে পছন্দ করেছে, তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। তারা নতুন হোক আর পুরাতন হোক, তাতে কোনো কিছু যায় আসে না। সবাই দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মাঠে কাজ করবো।’
উল্লেখ, ১৯৯১-২০০৮ সাল পর্যন্ত দুটি আসনই বিএনপির দখলে ছিল। এরপর আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়পুরহাট-১ আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মরহুম মোজাহার আলী প্রধান ও জয়পুরহাট-২ আসনে গোলাম মোস্তফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মোজাহার আলী প্রধান মারা গেছেন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। তার ছেলে মাসুদ রানা প্রধান এখন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের পদে আছেন।
কেকে/ এমএ