আসন্ন এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রাজবাড়ী-১ (রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ) আসনের সাবেক সাংসদ আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে, রাজবাড়ী-২ আসনে কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বিএনপির জাতীয় নির্বাহীর কমিটির সদস্য এবং রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সাংসদ। এছাড়াও তিনি রাজবাড়ীর পৌরসভার তিন বারের সাবেক চেয়ারম্যান।
পদ্মা বিধৌত ও রেলের শহর রাজবাড়ী। ১৯৮৪ সালে গোয়ালন্দ মহাকুমা থেকে রাজবাড়ী জেলার নামকরণ হয়। এ জেলায় রয়েছে ৫টি উপজেলা, ৩টি পৌরসভা ও ৪২টি ইউনিয়ন। কৃষি প্রধান জেলা রাজবাড়ী।
রাজবাড়ী-১ সংদীয় আসন-২০৯ (রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ) উপজেলা নিয়ে গঠিত এরমধ্যে রয়েছে ১৮টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা। এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৫২ হাজার ১৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লক্ষ ২৯ হাজার ৩৪৩ এবং মহিলা ২ লক্ষ ২২ হাজার ৮৩৯ ও হিজরা ১০ জন। ১৯৯১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই আসনে ২০০১ সালে শুধু একবার ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। এছাড়া দীর্ঘ সময় এই আসনে ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপির আব্দুল খালেককে পরাজিত করে এমপি হন আওয়ামী লীগের ওয়াজেদ আলী চৌধুরী, তার মৃত্যুর পর ১৯৯২ সালের উপ-নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী। ১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির গোলাম মোস্তফাকে পরাজিত করে এমপি হন কাজী কেরামত আলী। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলীকে পরাজিত করে এমপি হন বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, ২০০৮ সালে বিএনপির আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মকে পরাজিত করে এমপি হন আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী এবং ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় এমপি হন আওয়ামী লীগের কাজী কেরামত আলী। এছাড়া, ২০১৮ সালে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম ও ২০২৪ সালে ইমদাদুল হক বিশ্বাসকে পরাজিত করে এমপি হন কাজী কেরামত আলী। ২০১৮ সালে কাজী কেরামত আলী বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পান।
রাজবাড়ী-১ আসনে জামায়াত ইসলামীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের আমির মো. নুরুল ইসলাম ও খেলাফত মজলিসের রাজবাড়ী জেলা শাখার আমির মাওলানা ইলিয়াছ মোল্লাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা, গণঅধিকার পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সদস্য সচিব মো. রবিউল আযম, যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর খান, ইসলামী আন্দোলনের জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আমিনুল ইসলাম কাসেমী ও ইসলামী আন্দোলন রাজবাড়ী জেলা শাখার সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জাহিদ খানের নাম রয়েছে আলোচনায়।
এদিকে রাজবাড়ী-২ সংদীয় আসন-২১০ (পাংশা, বালিয়কান্দি ও কালুখালী) উপজেলা নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে রয়েছে ২৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা । এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লক্ষ ৫১ হাজার ৯০৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৯ এবং মহিলা ২ লক্ষ ৭০ হাজার ৮৫৩ ও হিজড়া ৫ জন। এ আসনে ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী ও ২০০১ সালে বিএনপি বিজয়ী হলেও দীর্ঘ সময় ২০২৪ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকে আওয়ামী লীগ। এখানে জামায়াত ইসলামীর রাজবাড়ী জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ ও খেলাফত মজলিসের রাজবাড়ী জেলা শাখার সেক্রেটারি ইব্রাহিম খলিলকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও এখনও ঘোষণা করা হয়নি বিএনপি, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন, এনডিম পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।
সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে এ আসনে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাজবাড়ী-২ আসনের সাবেক এমপি নাসিরুল হক সাবু, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক লিয়াকত আলী বাবু, উপজেলা বিএনপি নেতা মাহমুদুল হক রোজেন, বালিয়াকান্দি উপজেলা বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খান, সাবেক জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী রহমান মানিক, বিএনপি নেতা মুজাহিদুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাঈদ জামিল, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের কালুখালী উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মালেক, এনডিএম পার্টির মহাসচিব মোমিনুল আমিন।
কেকে/ এমএ