ক্রমে শান্ত হতে শুরু করেছে রুদ্রমূর্তির তিস্তা। গতকাল ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ক্রমে পানি কমে বর্তমানে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোড সূত্র জানায়, উজানের ঢলে (রোববার) বেলা তিনটার পর ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এরপর ক্রমে পানি বেড়ে সন্ধ্যা ছয়টায় বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার এবং রাত ১১টায় ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকে ক্রমে পানি কমতে শুরু করলে আজ সোমবার বেলা ১২টায় ওই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের ১৫টি গ্রাম ও চরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে করে এসব গ্রামের অন্তত ১০ সহস্রাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। সোমবার পানি কমায় স্বস্তি ফিরে এসব মানুষের মধ্যে।
ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, ‘রাতে নদীর পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেরশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই গ্রামের বোল্ডারের চর, খোকার চর, খাড়াপাড়া, ফ্লাটপাড়াসহ তিস্তা পারের বিভিন্ন চরগ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। এতে করে ওই রাতে এসব গ্রামের ১ হাজার ২০০ পরিবার পানিবন্দী হয়। সোমবার পানি কমায় এসব গ্রামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়’।
উপজেলার খালিশা চাপানী ইউনিয়নের বাইশপুকুর গ্রামের স্কুল শিক্ষক বিপুল চন্দ্র রায় বলেন,‘রাতে ভয়বহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্ঘুম রাত কাটে তিস্তা পারের মানুষের। সোমবার সকালে পানি কমলে মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে’।
তিনি জানান, বন্যায় আমন ক্ষেত তলিয়ে যায়। সোমবার সকাল থেকে পানি সরতে শুরু করলেও ঢলের পানিতে পলিমাটি ও বালি ভেসে আসায় এসব ক্ষেতের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গতকাল রোববার রাত ১১টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত একটার পর থেকে কমতে শুরু করলে সোমবার সকাল সাতটায় ৩০ সেন্টিমিটার কমে ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর থেকে পানি কমে বেলা ১১টায় ৯ সেন্টিমিটার এবং বেলা ১২টায় ১০ সেন্টিমিটার নিচে নামে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। পানি বৃদ্ধির ফলে তিস্তা নদীর জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি কালীগঞ্জ নামক স্থানে তিস্তা ডানতীর প্রধান ভাধে ভাঙন দেখা দেয়। সেটি মেরামতে কাজ চলমান আছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে’।
কেকে/ এমএস