গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অ্যানথ্র্যাক্স রোগের উপসর্গ নিয়ে মোছা. আজেনা বেগম (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই নারী উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় এক সপ্তাহ আগে আজেনা বেগমের একটি বকরি ছাগল বাচ্চা দেয়। দুইটি বাচ্চার মধ্যে একটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে ছাগল ও বাচ্চা দুটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তিনি। অসুস্থ বাচ্চাটি মারা গেলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর আজেনা বেগম সেটি জবাই করেন। এ সময় ছাগলের হাড়ের আঘাতে তার হাতের আঙুলে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এরপর স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন তিনি।
কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হলে পরিবারের সদস্যরা তাকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নিহত আজেনা বেগমের শরীরে অ্যানথ্র্যাক্স রোগের উপসর্গ ছিল। শনিবার রাতে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আমরা বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে জানিয়েছি।’
নিহতের ভাতিজা ও স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমবার যখন তিনি চিকিৎসা নিতে আসেন, তখন তার হাতের একটি আঙুলে কালো ফোঁসকা দেখা গিয়েছিলো। চিকিৎসা দিয়েছিলাম। পরে আবার আসলে দেখি ফোঁসকা শুকিয়ে গেছে, তবে স্থানটি লালচে ও ফুলে আছে। হিস্টরি শুনে সন্দেহ হয়েছিল অ্যানথ্র্যাক্সের জীবাণু থাকতে পারে। তাই দ্রুত হাসপাতালে যেতে বলেছিলাম।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক বলেন, ‘গত শনিবার রোগীকে খুব খারাপ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। আমরা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর মেডিকেলে রেফার করি। রোগীর শরীরে অ্যানথ্র্যাক্সের উপসর্গ ছিল বলে ধারণা করছি, তবে পরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর শরীরে প্রেসার অনেক কমে গিয়েছিল এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছিল। সব মিলিয়ে বিষয়টি সন্দেহজনক।’
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অ্যানথ্র্যাক্স রোগ সাধারণত সংক্রমিত গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসলে বা তার মাংস, চামড়া বা রক্তের সংস্পর্শে গেলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। দ্রুত চিকিৎসা না পেলে এটি প্রাণঘাতী হতে পারে।
এদিকে, এ ঘটনার পর পশ্চিম বেলকা গ্রামে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে এবং গবাদিপশুতে অ্যানথ্র্যাক্স প্রতিরোধে জরুরি টিকাদান কর্মসূচি গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে।
কেকে/এজে