নীলফামারী জেলার ডোমার-বসুনিয়া সাত কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয়নি চার বছরেও। বর্তমানে ডোমারবাসীর অভিশাপ এই সড়কটি। রাস্তাটি সংষ্কার কাজ শুরু করে তিন বছর আগে ৩৫ ভাগ কাজ ফেলে চলে যায় ঠিকাদার। ফলে বাকী কাজের জন্য জটিলতায় পড়েছে এলজিইডি বিভাগ।
তবে ডোমার উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম জানিয়েছেন, রাস্তাটির কাজ আবারো শুরু করা হবে। পূর্বের ঠিকাদারকে কাজ না করায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
এলাকাবাসী জানান, সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হলে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সংস্কার কাজ শুরু হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কটির কিছু অংশের পাকা স্তর ভেঙে রেখে কাজ বন্ধ করে চলে যায়।
এলাকাবাসীর দাবি, কাজ শুরুর আগে কষ্ট হলেও সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যেত। এরপর ভেঙে রাখার কারণে চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের যে অংশ ভালো ছিল, সেটি ভেঙে রেখেছে। অপরদিকে খারাপ অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এখন বিভিন্ন যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এতে করে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা।
ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের খাটুরিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মো. আনছারুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘বসুনিয়ার হাট এ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায় কেন্দ্র। বিভিন্ন কৃষি পণ্যসহ গরু-ছাগল কেনার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন এ হাটে। উপজেলা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার ভাঙ্গা সড়কের কারণে বিপাকে পড়েছেন দূরদুরান্তের ব্যবসায়ীরা। মালামাল পরিবহনের সমস্যায় কমেছে ব্যবসায়ীদের আগমন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার কৃষক। অপরদিকে, এ পথে প্রতিদিন ১০ হাজারের অধিক মানুষ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচল করেন। এলাকার ছেলে-মেয়েরা বাড়ি থেকে যাতায়াত করে ডোমার ও নীলফামারী শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। সড়কটির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সকলে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চার বছর আগে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজ শুরু হয় সড়কটির। এর কিছু দিনের মধ্যে কাজ বন্ধ করে সকল সরঞ্জাম নিয়ে সটকে পড়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। আগে ভাঙ্গা সড়কে ধুলাবালি হতো, এখন বৃষ্টির সময় ভরেছে কাদা পানিতে। এতে করে এলাকার জাল্লির মোড় থেকে ডোমার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।’
ডোমার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম চিকনমাটি গ্রামের জাফর আলী (৫০) বলেন, ‘কাজ শুরুর আগে কষ্ট হলেও সড়কটি দিয়ে চলাচল করা যেত। ঠিকাদার কাজ ফেলে রাখায় সম্পূর্ণ সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।’
তিনি জানান, ওই সড়কের ভালো অংশের দিকে ভেঙ্গে ঠিকাদার কাজ শুরু করেছিলেন। এখন কাজ ফেলে রাখায় সম্পূর্ণ সড়কে চলাচল করা যাচ্ছে না।
ডোমার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ওই সড়ক সংষ্কারে ২০২১ সালে দরপত্র আহ্বান করা হয়। যার প্রক্কলন ব্যয় ধরা ছিল ২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজটি পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টাররপ্রাইজ এ- ইউনিক কনস্ট্রাকশন জেভি। ২০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি করতে তারা চুক্তিবদ্ধ হন। সে অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৪ জুলাই কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে ২০২২ সালের অক্টোবর মাস থেকে কাজ বন্ধ রাখেন।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. নিজাম উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ডোমার উপজেলা প্রকৌশলী মো. ফিরোজ আলম বলেন, ‘আগের ঠিকাদার কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় আমরা তার চুক্তি বাতিল করেছি। নতুন করে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে’।
নীলফামারীর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফিরোজ হাসান বলেন, ‘পূর্বের ঠিকাদারের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ওই সড়কের কাজটি করতে আমরা দরপত্র আহ্বানের অনুমতি পেয়েছি। যেহেতু ওই পথে চলাচলকারী মানুষ কষ্ট ভোগ করছে, যত দ্রুত সম্ভব আমরা দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করবো।’
কাজটি সম্পন্ন করতে ২৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে বলে জানান তিনি।
কেকে/ এমএ