রাজশাহীর তানোর উপজেলায় সরকার নির্ধারিত পরিবেশকদের (ডিলার) কাছে পর্যাপ্ত সার না পাওয়ায় কৃষকদের ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কিনতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। কৃষি বিভাগ ডিএপি সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিত করলেও ডিলারদের দোকানে সারের সংকট দেখা যাচ্ছে। অথচ খোলাবাজারে বেশি দামে তা সহজেই মিলছে।
কৃষকদের অভিযোগ, চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে সারের একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, খুচরা দোকানে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা বাংলা ডিএপি সার বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। বেসরকারিভাবে আমদানি করা ডিকে ব্র্যান্ডের ডিএপি ১ হাজার ৭০০ টাকা এবং বিএডিসির সার ১৩০০-১৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ সরকার নির্ধারিত ডিএপি সারের মূল্য প্রতি বস্তা ১ হাজার ৫০ টাকা।
কৃষকদের অভিযোগ, তদারকির অভাবে এই সার খুচরা বিক্রেতা ও কীটনাশকের দোকানে চলে যাচ্ছে। ফলে তারা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের বিসিআইসি সার ডিলার মেসার্স নাবিলা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সেলিম। তার ব্যবসায় দেখভাল করেন বাবু।
বাবু বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে প্রায় সাড়ে ২৫ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ হলেও কৃষি কর্মকর্তা এখন ডিএপি সার বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তবে যারা আসছেন, তাদের কিছু কিছু করে সার দেওয়া হচ্ছে।’
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সেলিম মান্দা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউপির বাসিন্দা এবং তানোরের বরাদ্দের সার কৌশলে তার সাবাইহাটের দোকানেও বিক্রি করেন।
তিনি অর্থের বিনিময়ে বাধাইড় ইউনিয়ন পরিষদের নাগরিকত্ব সনদ নিয়ে ডিলারশিপ পেয়েছেন বলে কৃষকদের অভিযোগ।
কলমা ইউনিয়নের বিএডিসির পরিবেশক সুলতান আহমেদের দোকানে তার ছেলে সাখাওয়াত হোসেন গত ২৩ সেপ্টেম্বর একজন কৃষককে ডিএপি সার নেই বলে জানিয়েছিলেন। তবে সন্ধ্যার পর ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সাখাওয়াতের গুদামে ডিএপি সার মজুদ আছে।
সাখাওয়াত জানান, সেপ্টেম্বর মাসের জন্য তিনি ২৬ মেট্রিক টন ডিএপি সার বরাদ্দ পেয়েছিলেন এবং বর্তমানে সাড়ে ১২ মেট্রিক টন এখনো মজুত আছে।
চন্দনকোঠা গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলামকে সাখাওয়াত হোসেন ডিএপি সার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। পরবর্তী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘কৃষকেরা এখন নিয়ে মজুদ করবে বলেই তাদের সার দেওয়া হচ্ছে না। আলু চাষের সময় দেওয়া হবে।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে সালমা বলেন, ‘কোথাও বেশি দামে সার বিক্রির সুযোগ নেই এবং পর্যাপ্ত সার রয়েছে।’
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কৃষকেরা সার না পেলে বা বেশি দাম চাইলে সরাসরি কৃষি অফিসে অভিযোগ না করে কেন সাংবাদিকদের কাছে যাচ্ছে?’
শংকরপুর গ্রামের কৃষক বাবলু জানান, সার না পাওয়ায় তার নিচু জমির ধানে সার প্রয়োগ করতে পারেননি।
এদিকে, পরিবেশকদের দোকানের দেয়ালে কৃষি বিভাগের লিফলেট লাগানো দেখা যায়, যেখানে ডিএপি সারের উপকারিতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কেকে/ এমএ