চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ও জাফতনগর ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত খনখাইয়া খাল দীর্ঘদিন ধরে ভরাট হয়ে প্রাকৃতিক প্রবাহ হারিয়ে ফেলেছিল। এর ফলে কয়েক শত একর কৃষিজমি অনাবাদি হয়ে পড়ে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট ও বর্ষায় জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো স্থানীয়দের।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ফটিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কিলোমিটারের অধিক খাল পুনঃখনন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ধর্মপুর ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটার খালের মধ্যে ৩ কিলোমিটার পুনঃখনন শেষ হয়েছে। এর আগে ২০২৩ সালে জাফতনগর ইউনিয়নের ৫ কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন করা হয়। এতে শুষ্ক মৌসুমে শতাধিক একর কৃষিজমি আবাদ হয়েছে এবং বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতারও সমাধান হয়েছে।
খনখাইয়া খাল কৃষি সমবায় সমিতি সূত্রে জানা যায়, বৃটিশ আমলে খনখাইয়া খাল খনন করা হয়েছিল। এরপর আর কোনো সংস্কার করা হয়নি। মাঝে মাঝে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সর্তা খালের মুখে কিছু পরিষ্কার করা হলেও সেটাতেই শেষ হতো প্রকল্প। কিন্তু দীর্ঘ দশ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের মতো কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।
সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে আবেদন করা হলে, সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে সার্ভে রিপোর্ট করে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে ধর্মপুর অংশে তিন কিলোমিটার কাজ শেষ হয়েছে। তবে এখনো দুই কিলোমিটার কাজ বাকি। এ জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন।
পুনঃখননের ফলে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিজমিতে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘খাল খননের আগে বহু জমি পড়ে থাকত অনাবাদি। এখন শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যাবে, তাই আগের তুলনায় বেশি জমিতে আবাদ করাও সম্ভব হবে।’
বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় জলাবদ্ধতা নিরসনের আশা করে ওই এলাকার বাসিন্দা মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আগে বর্ষায় পানি নামতে না পারায় ঘরবাড়ি ডুবে যেত, রাস্তাঘাট চলাচল অযোগ্য হতো। খাল খননের ফলে এখন আর আগের মতো জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে না।’
ওয়ার্ড সদস্য মো. মহিন উদ্দিন বলেন, ‘এই খাল পুনঃখননের ফলে কৃষকদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। স্থানীয়রা দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।’
পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতি স্থানীয় পরিবেশেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সোলাইমান আকাশ বলেন, ‘পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশও এখন আগের চেয়ে বহু ভালো অবস্থায় এসেছে। এ উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত হওয়া দরকার।’
বিএডিসির উপ-সহকারী কর্মকর্তা দীপন চাকমা বলেন, ‘স্থানীয়দের দুর্ভোগের কথা ভেবে খাল পুনঃখননে একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিএডিসি। ধাপে ধাপে কাজ সম্পন্ন হলে কৃষি উৎপাদন ও বসতভিটার নিরাপত্তা দুটোই নিশ্চিত হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘খনখাইয়া খাল পুনঃখননে কৃষিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হবে, জলাবদ্ধতা কমবে এবং পরিবেশেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ প্রকল্প কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অবশিষ্ট অংশ সম্পন্ন হলে কৃষি উৎপাদন বাড়বে ও গ্রামীণ অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।’
কেকে/ এমএ