মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ইমামপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে নিজেদের কোটি টাকার সম্পত্তির দখল হারিয়ে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে ২ বোনের আশ্রয় হয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্পের ছাপরি ঘরে।
তীব্র দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে জীবনযাপন করা ওই ২ বোন তাদের সম্পত্তি ফিরে পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।
গজারিয়া উপজেলার আটানী মৌজায় সিএস ৩৩ নম্বর খতিয়ানে ৩৬০ ও ৩৯৪ নম্বর দাগে ৭৫ শতাংশ এবং দৌলতপুর মৌজায় সিএস ৫ নম্বর খতিয়ানে ১৪ নম্বর দাগে ২৪ শতাংশ সম্পত্তিসহ ৩ দাগে মোট ৯৯ শতাংশ সম্পত্তির সিএস রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন দৌলতপুর গ্রামের মৃত. আইনুদ্দিনের ছেলে কালাই ও আলাবক্স। বিগত সিএস রেকর্ডে উক্ত সম্পত্তি তাদের নামে শুদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ ও প্রচারিত হয়।
পরবর্তীতে কালাই তার একমাত্র কন্যা আনজুমান নেছাকে ওয়ারিশ রেখে মৃত্যুবরণ করলে তার ত্যাজ্য অংশে তিনি ওয়ারিশ হিসাবে মালিক ও ভোগ দখলকার বিদ্যমান থাকে।
অন্যদিকে অলাবক্স তার ছেলে মতলব ছৈয়ালকে রেখে মৃত্যুবরণ করলে সে ওয়ারিশ হয়।
মতলব ছৈয়াল ১ ছেলে তাজুল ইসলাম ও ২ কন্যা আলতামুন ও জোসনা বিবিকে রেখে মারা গেলে তারা তার সম্পত্তিতে ওয়ারিশ বিদ্যমান থাকে। উক্ত সম্পত্তি বিগত এসএ এবং আরএস রেকর্ডে তাদের নামে শুদ্ধভাবে লিপিবদ্ধ হয়। তাজুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার ত্যাজ্য অংশে ২ কন্যা আঙ্গুরি বেগম এবং লাকি বেগম প্রত্যেকে ১৬.২৪ শতাংশ করে এবং তাদের মা ৪.৬৪ শতাংশ সম্পত্তির মালিক থাকে। ২ মেয়ে এবং তাদের মা মিলে তিনটি দাগে ৩৭.১৩ শতাংশ সম্পত্তির মালিক থাকলেও পুরোটাই স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুস সাত্তার মাস্টারের মাধ্যমে দখল করে রেখেছেন।
আব্দুস সাত্তার মাস্টার কালাই-এর ওয়ারিশ আঞ্জুমান নেছার কাছ থেকে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি নিয়ে তার রেকর্ডীয় সম্পত্তির মালিকানার পরিমাণ এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি সম্পত্তি কয়েকটি দাগে বিক্রয় করে ফেলেছেন। বিগত ১৫-২০ বছর আগে সম্পাদিত এসব দলিলে তথ্যপ্রমাণের ব্যাপক ঘাটতি দেখা যায়। অধিকাংশ দলিলে ২৫ বছরের মালিকানার ধারাবাহিক বিবরণে সম্পত্তির পরিমাণও উল্লেখ করা হয়নি।
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন গজারিয়া উপজেলার বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার।
ভুক্তভোগী আঙ্গুরি বেগম বলেন, ‘আমরা হতদরিদ্র। বাল্য বয়সে আমাদের ২ বোনকে রেখে বাবা মারা যায়। আমাদের মুখে দু'বেলা খাবার তুলে দিতেই মাকে সীমাহীন কষ্ট করতে হয়েছে। কাগজপত্র সম্পর্কে আমাদের ধারণা না থাকায় আমাদের এক প্রতিবেশী আব্দুস সাত্তার মাস্টার প্রতারণা এবং জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে। আমাদের কিছু সম্পত্তিতে রেকর্ডীয় ঝামেলা রয়েছে তবে ৩৭.১৩ শতাংশ সম্পত্তিতে কোন ঝামেলা নেই তারপরও আমরা সেখানে ভোগদখলে যেতে পারছি না। সাত্তার মাস্টার আর তার লোকজনের হুমকি ধামকিতে আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। আমাদের সম্পত্তির দাম কোটি টাকা হলেও ভূমিহীন হিসাবে বৃদ্ধ মাকে নিয়ে আমরা ২ বোন থাকছি ষোলআনী আশ্রয়ন প্রকল্পে। আমরা আপনাদের কাছে বিচার চাই। আপনারা আমাদের সম্পত্তি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল হক বলেন, ‘এই মেয়ে দুটির কেউ নেই, লেখাপড়া না করায় তারা কাগজপত্র সম্পর্কে কিছুই বোঝে না। আমি তাদেরকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে টুকটাক সহায়তা করি, আর এতেই প্রভাবশালী চক্রটি আমার বিরুদ্ধে লেগে গেছে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন ফেক আইডি খুলে আমার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব আইডি থেকে নানা রকম মিথ্যা তথ্য দিয়ে পোস্ট করা হচ্ছে আর টাকার বিনিময় সেই পোস্ট বুস্ট করে সামাজিকভাবে আমাকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি।’
অভিযুক্ত আব্দুস সাত্তার মাস্টারের বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে অসংখ্যবার কল দেওয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে ভুক্তভোগীরা একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত আমাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন। আমরা সরেজমিন তদন্তে যা পাবো তার আলোকে প্রতিবেদন দিব।’
কেকে/বি