অবরুদ্ধ গাজার ওপর ইসরায়েলের নৌ অবরোধ ভাঙার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ৪৭টি নৌযানের বিশাল বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইতিমধ্যে ইতালির থামার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। আয়োজকেরা একে ‘ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ’ আখ্যা দিয়ে জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যেই ‘সংকটপূর্ণ এলাকায়’ প্রবেশের পথে এবং খুব শিগগির ইসরায়েলি বাহিনী বাধা দিতে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
দখলদার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ শত শত কর্মী-অভিযানকারীকে আটক, কারাবন্দী ও পরে বহিষ্কার করতে জটিল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সেই সঙ্গে কিছু জাহাজ মাঝসমুদ্রেই ডুবিয়ে দেয়া হবে। আর অন্যগুলোকে বন্দরে এনে জব্দ করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অভিযান ইহুদিদের পবিত্রতম দিন ইয়োম কিপুরের (স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু) সময়কালেই হতে পারে।
সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ ৫০০-র বেশি মানবাধিকার কর্মী ও ৪৭টি নৌযান ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ নামে পরিচিত এই বহরে রয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের আইনপ্রণেতা ও আইনজীবীরাও আছেন। এরই মধ্যে, ফ্লোটিলাকে ঠেকিয়ে দিয়ে এতে থাকা সব অধিকারকর্মীদের আটক করে কারাগারে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল ও ওয়াইনেট এই খবর দিয়েছে।
ইসরায়েলি নৌবাহিনী এর আগে কখনোই অধিকার কর্মী-অভিযানকারীদের গাজা উপকূলে পৌঁছাতে দেয়নি এবং এবারও আটক করার ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, বহরের কয়েকজন মূল অংশগ্রহণকারীর হামাসের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে।
ফ্লোটিলার ইতালীয় মুখপাত্র মারিয়া এলেনা ডেলিয়া ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইসরায়েল সম্ভবত আজ (বুধবার) রাতেই আমাদের আক্রমণ করবে, কারণ সব সংকেতই সেটাই বলছে।'
অভিযানকারীরা দাবি করেন, মঙ্গলবার রাতে আকাশে নজরদারি ড্রোনের সংখ্যা বেড়ে গেছে এবং আলোহীন অচিহ্নিত কয়েকটি নৌযান বহরটির কাছে এসে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে একটি ইসরায়েলি নৌ-টহল জাহাজকে বহরের অগ্রবর্তী জাহাজগুলোর পাশে দিয়ে যেতে দেখা গেছে।
ফ্লোটিলার সঙ্গে স্পেনের একটি ও ইতালির দুটি নৌযান রয়েছে, তবে সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো জানিয়েছে, এগুলো কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে না। ইতালির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বহরটি গাজা উপকূল থেকে ১৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছালে তারা আর সঙ্গ দেবে না।
এদিকে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বহরটিকে অবিলম্বে থামতে আহ্বান জানিয়ে বলেন, কথিত এই ত্রাণ মিশন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাব বাস্তবায়নের পথে বাধা হতে পারে।
এদিকে, বহরের আয়োজকেরা ইতালির বক্তব্যকে ‘সরাসরি নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা' বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইতালির সরকার আমাদের বিপদের মুখ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আবার ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। অথচ ইসরায়েল অবাধে ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা ও অনাহারে রাখছে। আমরা আবারও বলছি: ফ্লোটিলা এগিয়ে যাবে।’
ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডেফরিন জানিয়েছেন, এবার নৌবহর আটক করা আগের তুলনায় কঠিন হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নৌবাহিনী জাহাজে উঠে কর্মীদের আটক করবে এবং তাদের একটি বড় নৌযানে স্থানান্তর করে আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখান থেকে তাদের বহিষ্কার করা হবে। কিছু জাহাজ বন্দরে টেনে আনা হতে পারে, আবার কিছু জাহাজ সাগরেই ডুবিয়ে দেয়া হতে পারে বলেও সামরিক সূত্রে জানা গেছে।
কেকে/এজে