জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে ঝাড়-ফুকের নামে চলছে প্রতারণার রমরমা ব্যবসা। কথিত জ্বিনের মাধ্যমে টিউমার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে ঝাড়-ফুক, তেল পড়া, পানি পড়া দিয়ে। এমনকি জ্বিন দিয়ে করা হচ্ছে রোগীর অপারেশন পর্যন্ত। আর এভাবেই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে সহজ সরল মানুষের হাজার হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জ্বিন হাসিলকারী পঞ্চাশোর্ধ মহিলা জাহেরা। যিনি নিজেকে পরিচয় দেন বানেছা পরী নামে। তিনি সপ্তাহের চারদিন রোগী দেখেন। বাবার বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন তার এই তথাকথিত চিকিৎসালয়। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার বাবা আবুল হোসেন এবং বোনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম।
প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় অর্ধশত রোগী প্রাইভেটকার, সিএনজি, অটোরিকশা ও ভ্যানে করে এই নয়াপাড়া গ্রামে আসেন জ্বিনের দ্বারা চিকিৎসা নিতে। সিরিযালের জন্য প্রতি রোগীর কাছ থেকে নেওয়া হয় ৩০ টাকা।
চিকিৎসার নামে দেওয়া হচ্ছে আঙ্গুল দিয়ে ইনজেকশন। দেয়া হচ্ছে তেল পড়া, পানি পড়া ও ঝাড়-ফুক। এছাড়া মন্ত্র দিয়ে ছাড়ানো হচ্ছে জিন। রোগের ধরণ অনুযায়ী জ্বিন দিয়ে অপারেশন করার নামে ফি নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা। প্রতারণার এই ব্যবসার মাধ্যমে প্রতি মাসে সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অর্ধলক্ষাধিক টাকা।
তথাকথিত চিকিৎসালয়ে জাহেরা ওরফে বানেসা পরীর কাছে গোবিন্দগঞ্জ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মাসুম নামের হাতভাঙ্গা এক রোগী জানান, লোকমুখে তার চিকিৎসার কথা শুনেই তিনি এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন।
দুপচাচিয়া থেকে আসা মঞ্জিলা নামের এক টিউমার রোগী বলেন , লোকমুখে শুনে এসেছি দেখি কি হয়?
গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রসুল বলেন, এটা একটা ইসলাম বিরোধী কাজ। আমরা চাই গ্রাম থেকে এই প্রতারণার ব্যবসা বন্ধ হোক।
গ্রামের মুরুব্বি মাহতাব আলী প্রামাণিক বলেন, উনি বুঝ যেটা দিচ্ছে এটা প্রতারণামুলুক, এটা জায়েজ নয় এবং এটা ঠিক নয়। এই প্রতারণা ব্যবসা বন্ধের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কোনো সাংবাদিক রিপোর্ট করতে গেলে জাহেরার পরিবারের সদস্যরা নানা রকম বাধা দেন। কখনও অনুরোধ, কখনও অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করেন।
এদিকে, ভন্ড জ্বিন হাসিলকারি জাহেরার কবল থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর ইতোমধ্যে অভিযোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে জ্বিন হাসিলকারি কবিরাজ জাহেরা ওরফে বানেছা পরির সাথে দেখা করে কথা বলতে চাইলে তার বোনের স্বামী জাহিদুল ইসলাম তাতে বাধা দেন। এক পর্যায়ে জানান জাহেরা ওরফে বানেছা পরী নাকি অসুস্থ। তার সাথে কথা বলা যাবেনা। যা বলার তাদেরকে বলতে হবে।
একপর্যায়ে জাহেরা ওরফে বানেছা পরীর সাথে সাক্ষাৎ ও কথা হলে তিনি বলেন, আমি জিন কথা বলছি। আমার নাম বানেছা পরী। আমাকে সাইড দেন আমি চলে যাবো। সামনের জানালা থেকে সরে যান। আমি জিন মানুষের উপকারের জন্য পানি পড়া, তেল পড়া, ঝাড়ফুক দেই।.
কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার মাহফুজ আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ,আমি এইমাত্র জানতে পারলাম উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রামে জিন দ্বারা ঝারফুকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে যেটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন প্রতারণামূলক। এটা কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। কেবলমাত্র রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকরাই রোগীকে চিকিৎসা দিতে পারেন।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জাহান বলেন, পুনটের নয়া পাড়ার যে বিষয়টি আমরা শুনলাম গ্রামে একজন ব্যক্তি ভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে জিন দ্বারা ঝাড়ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছে। সেখানে কেউ এসেছেন ভাঙ্গা হাতের চিকিৎসা নিতে, কেউ আবার টিউমার রোগ নিয়ে, কেউ জিন ছাড়াতে। লোকের কথায় বিশ্বাস করে প্রতারিত হয়েছেন এমনটি জানিয়ে অনেকে অনুরোধ করেছেন এই প্রতারণা বন্ধ করার জন্য।
কেকে/ এমএস