দীর্ঘ আড়াই দশক পর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার উত্তরের জনগণের দাবি পূরণের পথে। ভেঙে যাচ্ছে বৃহৎ ফটিকছড়ি উপজেলা, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন প্রশাসনিক অঞ্চল ‘ফটিকছড়ি উত্তর’।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রি-নিকার সভায় নতুন এই উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী অক্টোবরে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক সুবিধা, উন্নয়ন ত্বরান্বিত করণ ও জনসেবার মানোন্নয়নের স্বার্থে এ দাবি স্থানীয়ভাবে উত্থাপিত হয়ে আসছিল। এই সিদ্ধান্ত বাস্তাবায়িত হলে প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজ হবে এবং সেবাপ্রাপ্তি আরও দ্রুত ও কার্যকর হবে। সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর এ বিষয়ে গেজেট এবং প্রশাসনিক কাঠামো গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রায় আড়াই লাখ মানুষের স্বপ্নপূরণ
নতুন স্বীকৃতি পাওয়া ভুজপুর থানা নিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’। আয়তনে ৪৭০ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা আড়াই লাখের বেশি। বহুদিনের এ দাবি পূরণের খবরে আনন্দে মিষ্টি বিতরণ করেছেন স্থানীয়রা। সরকারকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, ২০০০ সালের পর থেকে ফটিকছড়ি উপজেলাকে ভেঙে উত্তরে একটি আলাদা উপজেলা গঠনের দাবি জোরালো হতে থাকে। সব রাজনৈতিক দল এবং শ্রেণি-পেশার মানুষের ঐক্যবদ্ধ দাবিতে বিষয়টি সামনে আসে। তবে বিএনপি-জোট সরকারের আমলে বিষয়টি বাস্তবায়নের গতি কমে আসে। নানা বাঁধা-আপত্তিতে প্রক্রিয়া থমকে যায়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে নতুন করে উপজেলা বাস্তবায়নের কাজ এগোয়। সবশেষ চলতি বছরের ৫ আগস্ট বিষয়টি প্রি-নিকার সভার মাধ্যমে অনুমোদনের পথে পৌঁছায়। বহু চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দাবিটি অবশেষে প্রাথমিকভাবে অনুমোদন পেল।
২০০৭ সালে গঠিত ‘ভুজপুর’ থানা
২০০৭ সালের ২১ জুলাই ফটিকছড়ি থানার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে উত্তরের ৬টি— বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভুজপুর, হারুয়ালছড়ি ও সুয়াবিল ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় ‘ভুজপুর’ থানা। এই ভূজপুর থানার উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি ও রামগড়, পশ্চিমে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং দক্ষিণে হাটহাজারি উপজেলা।
এ অঞ্চলে রয়েছে ১৮টি চা-বাগান, ২টি রাবার বাগান, ২টি পুলিশ ফাঁড়ি, ৯৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২২টি মাদ্রাসা ও ৩টি স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এছাড়া বাজার ও বাণিজ্যকেন্দ্র রয়েছে অন্তত ৩০-৩৫টি এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুই শতাধিক। সদর থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরের সীমান্তঘেঁষা এ এলাকাটি স্বাধীনতার পর থেকেই পৃথক উপজেলার দাবি করে আসছিল। এখন তা পূরণ হতে যাচ্ছে, এতে স্থানীয়রা দারুণভাবে উৎফুল্ল।
রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া
ভুজপুর থানা যুবদলের আহ্বায়ক নুরুল আমিন আজাদ বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত। প্রাণের দাবিটি আড়াই দশক পর পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে। আমি অবিলম্বে সকল মানুষের সুবিধাজনক স্থানে উপজেলার অবকাঠামোগত কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
দাঁতমারা এলাকার সাংবাদিক কামরুল হাসান সবুজ বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি ছিল উত্তরাঞ্চলে একটি উপজেলা করা। সেই দাবি এখন বাস্তবায়নের পথে। এটি বর্তমান সরকারের শ্রেষ্ঠ উপহার। এজন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
ঢাকাস্থ উত্তর ফটিকছড়ি সমিতির সভাপতি তৌহিদুল আলম চৌধুরী বলেন, উত্তরের মানুষ দীর্ঘদিন যাবৎ নানাভাবে বঞ্চিত ছিল। নতুন উপজেলা বাস্তবায়ন হলে আমাদের নানাবিধ কর্মকান্ডে আলোর পথ দেখাবে। আমরা খুবই আনন্দিত।
উপজেলার প্রবীণ সাংবাদিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাস্টার আবুল বশর বলেন, ফটিকছড়ি উত্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ, আয়তনে বিশাল ও জনবহুল এলাকা। দীর্ঘদিন পর সেখানকার লোকজন নতুন উপজেলার স্বীকৃতি পাচ্ছেন। এতে ফটিকছড়ির দুইটি উপজেলার অবকাঠামোগত উন্নয়ন তরান্বিত হবে।
প্রশাসনের বক্তব্য
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, প্রি-নিকারে ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ নতুন উপজেলা হিসেবে অনুমোদন পেয়েছে। সবার দাবির প্রেক্ষিতে এটি সরকারের চলমান প্রক্রিয়া। দাবী পূরণে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এতে সরকারের সব বরাদ্ধই দ্বিগুণ হবে। হয়তো অবকাঠামো গড়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে সেবা কার্যক্রম দ্রুতই চালু হবে। এটি জনগণের উন্নয়ন ও সেবা নিশ্চিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
কেকে/ আরআই