মহম্মদপুর উপজেলার মোট ১০৮টি পূজা মণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নেই ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ।
বাবুখালি ইউনিয়নে ২৬টি মণ্ডপ রয়েছে। দীঘা ও রাজাপুর ইউনিয়নে রয়েছে ১৬টি করে, নহাটায় ১৪টি, পলাশবাড়ীয়া ও বিনোদনপুরে ১২টি করে এবং সদর ইউনিয়নে ৯টি মণ্ডপ। সবচেয়ে কম ৩টি মণ্ডপ রয়েছে বালিদিয়ায়। উপজেলাজুড়ে ১০৮টি মণ্ডপে পূজা শুরু হওয়ায় সবখানে উৎসবের আবহ বিরাজ করছে। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে রাজা সীতারাম রায়ের রাজবাড়ির সংলগ্ন কেন্দ্রীয় দশভূজা পূজা মণ্ডপ।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এদিন মহম্মদপুর উপজেলাজুড়ে দেবী দুর্গার বোধন, অধিবাস ও আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
হিন্দু ধর্মমতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ঘটলেও ষষ্ঠীর মধ্য দিয়েই পূজার মূল আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। এদিন দেবীর বোধনকে ঘিরে ভক্তরা বিশ্বাস করেন, শুভ শক্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে দেবী মর্ত্যে অবতীর্ণ হন।
পূজা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে উপজেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনুর আক্তার বলেন, “দুর্গাপূজা একটি ঐতিহ্যবাহী সার্বজনীন উৎসব। এ উৎসবকে ঘিরে মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে আনন্দ উদযাপন করতে পারে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজার আগে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার বিষয়ে একটি বিশেষ সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রতিটি পূজা মণ্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে এবং আমরা প্রতিটি মণ্ডপে নজরদারি অব্যাহত রেখেছি। এখন পর্যন্ত কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার খবর নেই। সকলের সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপিত হবে বলেই আমরা আশাবাদী।”
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী কানু তেওয়ারী বলেন, “এবার উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গাপূজার প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চলছে। জেলা পুলিশ, থানা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং ছাত্রদলও সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছে, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়।”
ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে মণ্ডপ এলাকা। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর নির্বিশেষে সবাই নতুন পোশাকে দেবী বন্দনায় অংশ নিচ্ছেন। ভক্তরা জানান, পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক মিলনমেলাও।
ষষ্ঠীর পর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে নানা আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। আগামী বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এবারের দুর্গোৎসব শেষ হবে। রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় দুর্গামণ্ডপের পুরোহিত কিশোর কিংকর তেওয়ারী জানান, “২১ সেপ্টেম্বর শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়। বোধনের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করা হয়েছে। এ বছর দেবী দুর্গা গজে (হাতির পিঠে) আগমন করেছেন এবং দোলায় (পালকিতে) গমন করবেন, যা শুভ ও সমৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে।
কেকে/বি